
চারটি হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকান্ডসহ দুই মামলায় চট্টগ্রামে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাকিম মোহাম্মদ মোস্তফা এ আদেশ দিয়েছেন। মহানগর আদালতের সহকারী পিপি রায়হানুল ওয়াজেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় ফজলে রাব্বী নিহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলা এবং নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাড়ির সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলাসহ মোট দুটি মামলায় সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সোমবার শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আড়াই মাস আগে চারটি হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হাইকোর্ট থেকে তারা জামিন পান। তবে ওই আদেশ চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
আদালত সূত্র জানায়, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে জামিনের বিষয়টি আড়ালে রাখতে পদে পদে কৌশলের আশ্রয় নেন তারা। শেষ পর্যন্ত খবর আর চাপা থাকেনি। সাজ্জাদ ১০টি খুনসহ ১৯ মামলার আসামি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে জোড়া খুন, প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী বাবলার আলোচিত খুনও রয়েছে। তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক খুনসহ আটটি মামলা।
পুলিশ, আদালত ও কারাগার সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানায় দোকান কর্মচারি শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্নাকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামিন দেন হাইকোর্ট। একই দিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানার ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় এ দ¤পতিসহ তিন জনকে জামিন দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২২ সেপ্টেম্বর ওই একই বেঞ্চ ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট পাঁচলাইশ থানার দোকান কর্মচারী মো. ফারুক হত্যা মামলায় তামান্না ও সাজ্জাদ জামিন পান। ওই দিনই পাঁচলাইশ থানার আফতাব উদ্দিন তাহসীন হত্যা মামলায়ও জামিন পান তারা।
চারটি মামলাতেই কোর্ট রুল নি®পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমনের দ্বৈত বেঞ্চ। ১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর জামিন হলেও এর নির্দেশে হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলী যথাক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর স্বাক্ষর করেন। সেই জামিন আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছে প্রায় আড়াই মাস পর গত ৮ ডিসেম্বর।
জামিনের বিষয়টি স্বীকার করে সাজ্জাদের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কারাবন্দি সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না চারটি মামলায় জামিন পেয়েছেন। সেই জামিননামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিন মাস আগে জামিন পেলেও সঙ্গে সঙ্গে জামিননামা চট্টগ্রাম আদালত কিংবা কারাগারে পাঠানো হয়নি। উল্টো পদে পদে জামিন নিয়ে লুকোচুরির কৌশল অবলম্বন করা হয়। জামিন পেতে হাইকোর্টে নারী হিসেবে সহানুভূতি পেতে চারটি মামলায় তামান্নার নাম রাখা হয় এক নম্বরে। সাজ্জাদের নাম ছিল আবেদনের দুই ও তিন নম্বরে। আবেদনে সাজ্জাদের সন্ত্রাসী পরিচয় কৌশলে আড়ালে রাখা যায় সে চেষ্টা করা হয়। যদিও হাইকোর্ট থেকে কোনও আসামি জামিন পেলে সেই জামিননামা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে কারাগারে পৌঁছে আসামিকে জামিনে মুক্ত করে আনা হয়। এছাড়া হাইকোর্টে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ জামিন পেলে চেম্বার জজ আদালতে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ জামিন স্থগিত করলেও এখানে তা করা হয়নি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ বলেন, সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি মামলায় হাইকোর্টের জামিননামা এসেছে। তার স্ত্রী তামান্নার চারটি মামলায় জামিননামা এসেছে। সাজ্জাদ বর্তমানে রাজশাহী ও তামান্না ফেনী কারাগারে। তাই এ সংক্রান্ত কাগজ ওই দুই কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার তিনটি জামিননামা আসার পর এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
গত ১৫ মার্চ রাজধানী থেকে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১০ মে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয় বহদ্দারহাট এলাকা থেকে। এরপর থেকে কারাগারে বন্দি আছেন তারা। বর্তমানে সাজ্জাদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং তার স্ত্রী তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছেন। গত মাসে তাদের চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ওই দুই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর গ্রামে। আর স্ত্রী তামান্নার বাড়ি রাউজানে।











































