কভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশীয় অর্থনীতির অন্যতম খাত তৈরি পোশাক শিল্প এখনও হুমকির মুখে দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে। এর মধ্যে চীনের অর্ডারে পোশাক খাতে আশার আলো জ্বলছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন এ খাতে ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ। সাঁয় মিলিয়েছেন শিল্প পুলিশও।
বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামে বকেয়া বেতন আদায়ে পৃথকভাবে আনুমানিক ৮টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। ছোট-বড় মিলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সচল প্রায় ৬০০টি পোশাক কারখানার তিনটিতে এখনো শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। আনোয়ারা, কালুরঘাট ও আলফা গলি এলাকায় এ কারখানাগুলোর মধ্যে অচল রয়েছে কালুরঘাটের কারখানাটি।
গাজীপুর, আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার আন্দোলনের কারণে বায়ররা এসব জায়গা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও চট্টগ্রাম নিয়ে তারা আশাবাদী। ফলে বায়ারসহ ওখানকার ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রয়াদেশ নিয়ে আসছে চট্টগ্রামে। ফলে ২ শতাংশ কাজ বেড়েছে চট্টগ্রামের কারখানায়। অন্যদিকে চীন থেকে সরে যাওয়া অর্ডারও ধরছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এজন্য দেশের শান্তি শৃংখলা ঠিক করতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা।
বিজিএমইএ চট্টগ্রামের সিনিয়র সিস্টেম এনালাইসিস্ট মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘করোনা মহামারির পর সারাবিশ্বের বড় বড় শো রুমগুলো প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল। তাই কিছু অর্ডার বাড়তি আসলেও সেটি তখনই আমরা সাময়িক অর্ডার হিসেবে ধরেছিলাম। পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হলে তখনও আমাদের অর্ডার কমে যায়। কিন্তু এটিও আমাদের বাজারের উপর মৌলিক কোনো প্রভাব পড়েনি। বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা আনরেস্ট থাকার কারণে চট্টগ্রামে অর্ডার বেড়েছে। আগে যেখানে ৫ শতাংশ হতো, বর্তমানে এটি ৭ শতাংশের মতো। এটি চট্টগ্রামের মৌলিক চিত্র না। মৌলিক প্রভাবটা পড়বে কান্ট্রি ইমেজের উপর।’
চট্টগ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মারামারির বাজারে সস্তায় মাছ কিনতে কেউ যাবে না। তাই বায়ারদের চাহিদা হলো তাদের ফ্যাসিলিটিজ। তাদের ফ্যাসিলিটিজ বাড়লে তারা আসবে। এরজন্যও দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ঠিক করা জরুরি। শান্তি শৃঙ্খলা ঠিক না থাকলে বাইরের ব্যবসায়ীরা তাদের সরকারের কথায় কোনো জায়গায় ইনভেস্ট করবে না। দেশের চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে চট্টগ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মিলবে না। তাই বায়াররা চট্টগ্রামে কারখানায় কাজ দিতে আগ্রহী হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গার ব্যবসায়ীরাও চট্টগ্রামের কোনো কোনো কারখানায় সাব-অর্ডারে কাজ করছে।’
এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় বর্তমান প্রশাসক কমিটির সদস্য এবং ক্লিপ্টন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক অরাজকতা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এজন্য আমাদের নিরাশাও আছে। কারণ কভিডের পর থেকে আমাদের ব্যবসা ৪০ শতাংশ খারাপ। বর্তমানে আমরা চাই, সরকার শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে আন্তরিক হোক। কারণ সামনে আমাদের অর্ডার বাড়বে। চীনের অর্ডার পাওয়া শুরু হয়েছে। চীনের সরে যাওয়া অর্ডারের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব কিছু অর্ডার আমরা পাবো। এজন্য দুইটি পরিবর্তন দরকার। একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার এবং অন্যটি আমাদের ব্যবসায়ীদের কাজের প্যাটার্ন। চীনের অর্ডারগুলো একদমই রেডি প্রসেস। এজন্য আমাদের কাজের ধরণ পাল্টাতে হবে। এটি আমরা করে নিতে পারবো। তাই সামনে ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি।
কারখানায় কাজের পরিবেশ ও সার্বিক শান্তি শৃ্ঙ্খলা নিয়ে জানতে চাইলৈ চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্প পুলিশের উপ মহাপরিদশক (ডিআইজি) মো. সোলাইমান বলেন, ‘দেশের অন্যান্য জায়গায় শ্রমিক বিক্ষোভের যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তার সঙ্গে চট্টগ্রামের কোনো শিল্প-কারখানার কোনো সম্পর্কও নেই। চট্টগ্রামে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়নি। তবে এটি ঠিক শুরুতে কয়েকটি শিল্প কারখানায় বকেয়া বেতন ইস্যুতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে। এসবের সমাধানও হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এসব আন্দোলন প্রায়ই হয়। তাই এটিতে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নাই। বর্তমানে তিনটি কারখানায় শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে। তবে এগুলো রাস্তায় নেমে তারা করছে না। তারা কারখানাতে কাজ বন্ধ রেখে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। কারখানাগুলোতে প্রায় সময় এ ধরনের সমস্যা হয়। এছাড়া বলতে পারি, চট্টগ্রামে শিল্প-কারখানায় কর্মপরিবেশ আছে। তাই কাজ করতেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না- বললেন শিল্প পুলিশের উপ মহাপরিদশক (ডিআইজি) মো. সোলাইমান।’
You cannot copy content of this page