শুক্রবার- ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

জামিন পেলেও মুক্তি মিলছে না বাবুল আক্তারের

জামিন পেলেও মুক্তি মিলছে না বাবুল আক্তারের

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও কারাগার থেকে মুক্তি মিলছে না সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের। বেইল বন্ড ক্লিয়ারেন্স নিতে না পারায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেয়নি।

আবার এদিকে বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। আগামী মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতির আদালতে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। এরপর বাবুল আক্তারের মুক্তি মিলবে কি না সে বিষয়টি পরিস্কার হবে।

রবিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে এমন তথ্য জানান চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। সেই অনুযায়ী তার জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সে হিসেবে রবিবার সকালে তার মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু বেইল বন্ড ক্লিয়ারেন্স নিতে না পারায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। কালকের (সোমবার) দিকে এটা নিয়ে কাজ করবে কারা কর্তৃপক্ষ। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকলে তার মুক্তি আগামীকাল হতে পারে।

আবার এদিকে বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। আগামী মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতির আদালতে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। সেখানে জামিন স্থগিত হলে তার মুক্তি নাও হতে পারে।

এসপি বাবুল আক্তারের আইনজীবীর দাবি, কোনো এক অশুভ শক্তি শুরু থেকেই তাকে এই মামলায় ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে। আর সেই শক্তি কোর্ট থেকে শুরু করে কারাগার পর্যন্ত সবকিছুতে প্রভাব বিস্তার করায় বাবুল আক্তারের কারামুক্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, নানা তালবাহানার পর আজ বিকেলে আদালত থেকে জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়। কথা ছিল বিকেল ৫টায় তাকে মুক্তি দিবে। আমাদের বলা হয়েছে তার আগেই যেন আমরা যাই। কিন্তু আগে গেলেও আজ মুক্তি দিবে না বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল সকাল ১০টার আগেই মুক্তি দেওয়ার কথা তারা জানিয়েছে।

জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামিন আদেশেই উচ্চ আদালত বলেছেন স্টে অর্ডার ছাড়া তার মুক্তি কেউ আটকাতে পারে না। আর জামিন হওয়ার পরেও তিনি কারাগারে থাকাটা তো কষ্ট দেওয়া, হয়রানি করা। যে অশুভ শক্তি শুরু থেকেই কাজ করছে এর পেছনে সেই শক্তিই এখন প্রভাব বিস্তার করছে। মুক্তি দিলে সে তো পালিয়ে যাচ্ছে না। কোর্ট যদি তাকে আবার আত্নসমর্পণ করতে বলে সে করবেন।

গত ২৭ নভেম্বর স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে বাবুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

সেদিন আইনজীবী শিশির মনির বলেছিলেন, বাবুল আক্তার অন্যান্য মামলায় আগেই জামিনে আছেন। স্ত্রী হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ায় তার মুক্তিতে বাধা নেই। বাবুল আক্তার তিন বছর ৭ মাস ধরে কারাগারে আছেন, এই বিবেচনায় আদালত তাকে ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। ১৮ আগস্ট বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। তখন তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাবুলের মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

ওই দিনই মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা আরেকটি মামলা করেন। সেদিনই বাবুল আক্তারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাবুল ও শ্বশুরের করা দুটি মামলা তদন্ত করে পিবিআই। শ্বশুরের মামলায় ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদন গ্রহণ করে বাবুল আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার আগে বাবুল আক্তারের করা মামলায় ৯ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সেই মামলায় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্র ওই বছর ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। গত বছর ১৩ মার্চ বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন, বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম। ওই বছরের ৯ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

ঈশান/মসু/বেবি

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page