
# ভিপি-জিএসসহ জয়ী ৭ জন
# অংশ নেন ৫০ জন প্রার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নিজেদের শক্তিমত্তা ও সংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি পদে বিজয় অর্জন করে তারা অসাধারণ চমক সৃষ্টি করেছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনেও চট্টগ্রামের সাতজন প্রার্থী ডাকসুতে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এবারের ডাকসু নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো ভিপি ও জিএস-এর মতো দুটি শীর্ষ পদে চট্টগ্রামের প্রার্থীদের নিরঙ্কুশ বিজয়।
শুধু কি ভিপি-জিএস; পদাধিকার বলে সভাপতির আসনে বসবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, তিনিও চট্টগ্রামের সন্তান। চট্টগ্রামের বিজয়ের মিছিল এখানেই থেমে থাকেনি। স¤পাদকীয় আর সদস্য পদের পাঁচটিতেও জয়ী হয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের তরুণ-তরুণীরা। হল ছাত্র সংসদগুলো মিলিয়ে এই সংখ্যা আরও বড়।
এটি যেন কেবল তাদের ব্যক্তিগত কোনো অর্জন নয়, বরং তারা যেন বার্তা দিলেন-রাজধানী নির্ভর রাজনীতির সমীকরণেও সমান শক্তি নিয়ে উঠে আসতে পারেন প্রান্তিক এলাকার আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীরাও। তারা চট্টগ্রামকে নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়।
বিজয়ী সাত জনের কার বাড়ি কোথায় :
ভিপি পদে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন মো. আবু সাদিক কায়েম। জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বের গুণে যিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশের আলোচিত মুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের এই শিক্ষার্থীর পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামের সাতকানিয়া হলেও বাবার ব্যবসার সূত্রে থিতু হয়েছেন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি শহর এলাকায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক এই সভাপতি খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সাদিক শিবিরের দায়িত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বও সামলেছেন। ডাকসু নির্বাচনে তিনি এককভাবে ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন।
একই জোট থেকে সাধারণ স¤পাদক (জিএস) পদে বিজয়ী এস এম ফরহাদের গল্পটাও প্রায় একই। তার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়। তবে সাদিকের পরিবারের মতো পরে তার পরিবারও চলে যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে। ফরহাদ ওই জেলার মাইনী গাথাছড়া বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাসের পর চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম শেষ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি। ডাকসু নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট।
ভিপি ও জিএস-এর মতো দুটি প্রধান পদে চট্টগ্রামের জয়কে সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর কাছে এক বিশেষ অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন স¤পাদক পদে জয়ী ফাতেমা তাসনিম জুমার বাড়িও কক্সবাজারের মহেশখালীতে এবং কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া স¤পাদক পদে জয়ী উম্মে ছালমাও সাতকানিয়ার কন্যা।
কার্যকরী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বমিত্র চাকমা ও হেমা চাকমা, আর সাতকানিয়ার রায়হান উদ্দীন। রায়হান ও উম্মে ছালমা আবার দ¤পতি, স্বামী-স্ত্রীর যুগল বিজয় হয়েছে বেশ আলোচিত।
চট্টগ্রাম থেকে অংশ নিয়েছেন ৫০ জন প্রার্থী :
এবারের ডাকসু নির্বাচনে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে অংশ নিয়েছেন ৫০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে ১ জন, এজিএস পদে ২ জন, স¤পাদকীয় ১৩ পদে ১৪ জন এবং কার্যকরী সদস্য পদে ১৫ জন প্রার্থী ছিলেন।
এই অংশগ্রহণ চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজের সক্রিয়তা ও সংগঠনশক্তির পরিচায়ক হিসাবে দেখা হচ্ছে। কারণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা মিলে গড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম, যার ভাষা, সংস্কৃতি আজও আপন আবেগে ভরপুর। চট্টগ্রামের দুজন মানুষ একসঙ্গে হলেই এদের কথোপকথন গড়ায় মাতৃভাষার স্রোতে, সেটা দেশে হোক কিংবা বিদেশে। বিষয়টি চট্টগ্রামের জন্য গর্বের।
ডাকসু নির্বাচন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা দেশের রাজনীতির দিকনির্দেশক হিসেবে বিবেচিত। সেখানে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের শক্তিশালী অবস্থান তাদের ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি চট্টগ্রামবাসীর গর্বের বিষয়ে রুপ নেয়। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চ বলা হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুকে।
এর আগে ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভোট অনুষ্ঠিত হলে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরাও সাফল্য পেয়েছিলেন। তখন সহ-সাধারণ স¤পাদক (এজিএস) পদে সাদ্দাম হোসেন, সাহিত্য স¤পাদক পদে মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক স¤পাদক পদে আসিফ তালুকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স¤পাদক পদে আরিফ ইবনে আলী এবং সদস্য পদে তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা শিকদার ও ফয়সাল আহমেদ জয়লাভ করেছিলেন।