রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

দুর্নীতির বরপুত্র রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস

এক অর্থবছরে এপিপির ৩৬ কোটি টাকা লোপাট!

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিএমই দপ্তরে এক অর্থবছরে এপিপির ৩৬ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। দপ্তরের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস ও রেলওযে পূর্বাঞ্চলের সদ্য অবসরে যাওয়া মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।

ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এপিপির আওতায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক প্রকৌশল দপ্তর। বরাদ্দের ১৪ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম ক্রয় (সিসিএস) দপ্তরের মাধ্যমে ক্রয় করা হলেও বাকি ৩৬ কোটি টাকা নানা কারসাজির মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে।

সূত্র মতে, এই ৩৬ কোটি টাকার হিসাবে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে এই ৩৬ কোটি টাকার কেনাকাটার অস্তিত্ব শুধুমাত্র হিসাব দপ্তরের কাগজে-কলমেই রয়েছে, বাস্তবে নেই। যা কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই এর মতো।

যার সত্যতা মিলেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব দপ্তরের তথ্যেও। দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সিএমই দপ্তরের এপিপির ৩৬ কোটি টাকার বিল হিসাব শাখা থেকে তোলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশদ বিবরণী দেওয়া সম্ভব নয়। এটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। খরচ (ঘুষ) দিলে বিশদ বিবরণীর তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। এ জন্য তিনি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।

দপ্তরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ধরণের অনিয়ম সাধারণত একজনের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই অনিয়ম ঠিকাদার, এপিপি বাস্তবায়ন কমিটি ও সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন।

সূত্রের দাবি, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস অত্যন্ত কুট কৌশলে কাগজে-কলমে হিসাব দেখিয়ে এপিপির আওতায় বরাদ্দকৃত এই ৩৬ কোটি টাকা লোপাট করেছেন।

শুধূ এই ৩৬ কোটি টাকা নয়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদাররা। ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস কেনাকাটার যে কোন ফাইল মোটা অংকের কমিশন ছাড়া ছাড়ে না। ফাইলের প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ পারসেন্ট কমিশন আদায় করেই ফাইলে স্বাক্ষর করেন তিনি।

অন্যথায় ফাইল আটকে রেখে সময়ক্ষেপণ করে হযরানি করেন ঠিকাদারদের। তার অধীনে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে রেলওয়ের ক্যারেজে উন্নতমানের যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামতের কারখানা থাকলেও অত্যন্ত কুট কৌশলে তিনি তা না করে সব যন্ত্রাংশ খোলা মার্কেট থেকে ক্রয় করে সরকারের কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করেন।

আর এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয় গোপন রাখতে নিরাপত্তার অজুহাতে কোন সাংবাদিককে ক্যারেজে প্রবেশ করতে দেন না। অথচ ঠিকাদার-সাপ্লাইয়ারের পরিচয়ে ক্যারেজে প্রতিদিন শত শত মানুষ নির্বিঘ্নে প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতে তিনি ঠিকমতো অফিসও করেন না। প্রায় সময় তিনি অবস্থান করেন ঢাকায়। সপ্তাহে দুই-একদিন অফিস করলেও বসেন বিকেলে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস বলেন, ঠিকাদারদের অভিযোগ স¤পূর্ণ মিথ্যে। আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। কাজ দিয়ে আমি সন্তুষ্ট করতে পারিনি বলেই ঠিকাদাররা এমন অভিযোগ করেছে।

এপিপির ৩৬ কোটি টাকার অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। কারণ এপিপি আমি করি না। ক্যারেজের ভেতরে প্রকৌশলী যারা বসেন তারাই এপিপি করেন। আপনি তাদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু ক্যারেজে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ বলে জানিয়ে দেন।

এ বিষয়ে জানতে সদ্য অবসরে যাওয়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page