সোমবার- ১৮ আগস্ট, ২০২৫

দূর্নীতির অভিযোগে রেল ডিজি’র অপসারণের সিদ্ধান্ত

বেআইনি বলছে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি

দূর্নীতির অভিযোগে রেল ডিজি'র অপসারণের সিদ্ধান্ত

দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজল হােসেনকে (ডিজি) অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অডিট আপত্তির ভিত্তিতে দূর্নীতির অভিযোগ উঠে ডিজি‘র বিরুদ্ধে। আর এ সিদ্ধান্তকে বেআইনি, অযৌক্তিক এবং প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচার বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।

সম্প্রতি রেলপথ সচিব বরাবর পাঠানো এক স্মারকলিপিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, বর্তমান রেল মহাপরিচালক একজন অভিজ্ঞ, পেশাদার এবং নিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যাঁর মেয়াদ ২০২৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে।

অথচ একটি সাধারণ অডিট আপত্তিকে ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাঁকে অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা সংবিধান, সরকারি কর্মচারী বিধিমালা এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচার মানদণ্ডের পরিপন্থী।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, অডিট আপত্তিটি একটি প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণমাত্র, যা আপিলযোগ্য এবং নিষ্পত্তিযোগ্য। এটি কোনো ফৌজদারি মামলা নয় এবং এ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন দ্বারা গৃহীত হয়নি।

রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির ভাষ্য অনুযায়ী, সরকার যদি কোনো অভিযোগে পদক্ষেপ নিতে চায়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ধারা ৩(ক) ও ৫ অনুযায়ী, যথাযথ তদন্ত, শোকজ, জবাব গ্রহণ ও শুনানি ছাড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বেআইনি।

সংগঠনটি আরও দাবি করে, এই ধরনের পদক্ষেপ প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিপন্থী। অপসারণের চেষ্টা যদি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কাউকে পদে বসানোর উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তবে সেটিকে ‘মালাফাইড ইন্টেনশন’ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

উচ্চ আদালতের নজির তুলে ধরে স্মারকলিপিতে বলা হয়, রীট পিটিশন নং ৭২৬৫/২০২২-এ হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে, “কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই দুর্নীতির অভিযোগে পদচ্যুতি অসাংবিধানিক।” সেই মামলায় হাইকোর্ট অপসারণ আদেশ স্থগিত রেখেছিল।

পোষ্য সোসাইটির দাবি, রেল মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো চূড়ান্ত অভিযোগ, আদালতের রায় কিংবা দুদকের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাঁকে অপসারণ রেলওয়ে প্রশাসনে নেতিবাচক বার্তা দেবে এবং নেতৃত্ব কাঠামোকে দুর্বল করবে।

সংগঠনটি তাদের চার দফা দাবি তুলে ধরেছে:
১. অভিযোগ তদন্ত ও শুনানির মাধ্যমে আইনগত নিষ্পত্তি করতে হবে;
২. একতরফা অপসারণ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে;
৩. রেলওয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত ছাড়া ডিজি পদে হস্তক্ষেপ চলবে না;
৪. প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে ডিজির সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা হবে।

সংগঠনটি রেল সচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, অপসারণ সম্পর্কিত গুজব ও পদক্ষেপ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে। অন্যথায়, তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আইনগত প্রতিকার নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page