
# ১০ লাখ নথি ধ্বংসের উদ্যোগ
# বাড়বে কাজের গতি
অলি-গলিতে নথির স্তুপ, এমনকি নথিতে ঠাসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার কক্ষও। যেখানে আরামে বসে কাজ করা তো দুরের কথা, পূরণো এসব নথির দূর্গন্ধে বসা দায়। হাঁটা দায় অলি-গলিতেও। নথির ভারে যেন নুইয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। যেখানে অফিসিয়াল কোন পরিবেশই নেই নথির কারণে।
তবে আশার কথা হচ্ছে পরিবেশ ফেরাতে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রায় ১০ লাখ নথি ধ্বংস বা বিক্রি করে সরানোর উদ্যেগ নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। যা হলে পরিবেশের সাথে কাজের গতি বাড়বে এমনটাই আশা করছেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার নথি জমা পড়ে। এরমধ্যে ৫ হাজার রপ্তানি পণ্য চালানের “বিল অব এক্সপোর্ট” ও ২ হাজার আমদানি পণ্য চালানের “বিল অব ইমপোর্ট” কাগজপত্র জমা হয় কাস্টম হাউসের বিভিন্ন শাখায়।
ফলে দীর্ঘদিন ধরে জমা হতে থাকা এসব নথির বিশাল স্তুপে পরিণত হয় কাস্টম হাউসের বিভিন্ন কক্ষ। এর মধ্যে বাদ নেই কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কক্ষ। এমনকি অলিগলিতেও স্তুপ করে রাখা হয়েছে নথির পর। যেগুলো থেকে এক ধরণের রাসায়নিকের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে অফিসে বসা তো দূরের কথা, কাস্টম হাউসের অলি-গলিতেও হাঁটা দায়।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরণের নথি সরানোর উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে অধ্যাবদি সব নথি সংরক্ষণে থাকবে। কাস্টমস হাউসের প্রত্যেকটি শাখায় পুরানো নথি গুলো ইনভেন্ট্রি করা হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে এ কাজ। প্রত্যেকটি নথি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এর জন্য অতিরিক্ত শ্রমিক কাজ করছে। ইনভেন্ট্রি শেষ হলে জানা যাবে কত নথি সরানো হবে তার সংখ্যা। তবে এর পরিমাণ ১০ লাখের কম হবে না।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার (প্রিভেন্টিভ) এম এইচ কবির বলেন, কাস্টমস হাউসের শুল্কায়ন শেষ হওয়া নথি ধ্বংসের বা নিলামে বিক্রির উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে হাউসের প্রত্যেকটি শাখায় ইনভেন্ট্রির কাজ চলছে। আসলে ইনভেন্ট্রি শেষ হতে আরও এক দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। এরপর পর বলা যাবে কত নথি সরানো হচ্ছে। তবে যা মনে হচ্ছে এ সংখ্যা দশ লাখের কম হবে না। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের সব নথি সরানো হবে। কারণ এগুলো আর সংরক্ষণে রাখার প্রয়োজন নেই।
তিনি জানান, যে সমস্ত নথি মামলা সংক্রান্ত ঝামেলা আছে সে গুলো সংরক্ষণ করা হবে। যেসব নথিতে কোন ধরণের ঝামেলা নেই, চালান খালাস হয়ে গেছে, কোন ধরণের আপত্তি নেই মুলত সেসব নথি সরানো হবে। কারণ এসব নথি কাস্টস হাউসের রাখার দরকার নেই। এসব নথি কারণে কর্মকর্তারা বসার জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যায় না। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কক্ষগুলো নথির গুদামে পরিণত হয়েছে। এসব নথি সরানো হলে হাউসে জায়গা প্রশস্ত হবে। ফিরবে কাজের পরিবেশ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টস হাউস দেশের খুবই ব্যস্ততম শুল্ক স্টেশন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিংহভাগ রাজস্ব চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়েই আসে। সুতরাং এর ব্যাপকতা অনেক। প্রতিদিন এখানে ৭ হাজার বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়। সে হিসেবে যে পরিমাণ নথি কাস্টম হাউসে দাখিল হয় তা বছরের পর বছর জমা রাখার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে যে গুলো রাখা দরকার বিশেষ করে মামলা ও অন্যান্য আপত্তি সংক্রান্ত নথি সে গুলো রেখে বাকি গুলো সরানোর দাবি আমাদেরও ছিল। কারণ কর্মকর্তাদের আশেপাশে নথি রাখার কারণে সিএন্ডএফ কর্মীরা কাজ করতে পারে না। সে গুলো সরালে জায়গা প্রশস্ত হয়। অনেক দেরিতে হলেও নথি সরানো উদ্যেগ গ্রহণ করায় আমরা ধন্যবাদ জানাই কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, পুরানো নথি ধ্বংস করা বা সরিয়ে ফেলার যে উদ্যেগ কাস্টম হাউস নিয়েছে এতে কাস্টমস কর্মকর্তা ও সিএন্ডএফ কর্মীদের কাজের গতি বাড়বে। আগে কাস্টম হাউসের শাখা গুলো একেকটি নথির গুদাম ছিল এবার তা পরিষ্কার হবে। কাস্টম হাউসকে সচল ও স্বাভাবিক রাখার জন্য সব সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমাদেরও তাগাদা থাকে।
কাস্টমসের তথ্যমতে; চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৫ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৫১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয় এ শুল্ক স্টেশন থেকে। পরের অর্থবছরে আদায় হয় ৫৯ হাজার কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয় এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৫৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল।