রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’ নির্মাণে মিয়ানমারের বাধা

বেজা বলছে, ডেভেলপার মিললেই শুরু হবে মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন

বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বদক্ষিণ-পূর্বের নাফ নদীতে জেগে ওঠা একটি চরের নাম জালিয়ার দ্বীপ। দেশের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে দ্বীপটিতে নাফ ট্যুরিজম পার্ক গড়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। দ্বীপটির উন্নয়নকাজে নাফ নদীর বালি ব্যবহারে মিয়ানমারের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ বন্ধ হওয়ার গুঞ্জন ওঠে।

তবে, সব সমস্যার সমাধান করে পার্ক নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের (ডেভেলপার) খোঁজ করছে। ডেভেলপার মিললেই শুরু হবে মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন।

জানা যায়, জালিয়ার দ্বীপটির দক্ষিণ-পূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের একটা দ্বীপ (লালদিয়া) ও উত্তর-পশ্চিমে টেকনাফের নেটং পাহাড়। এই দ্বীপ দীর্ঘদিন ধরে ছিলো স্থানীয়দের দখলে। সেখানে তারা লবণ ও চিংড়ি চাষ করতো।

২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জালিয়ার দ্বীপে নাফ ট্যুরিজম পার্ক গড়ার মহাপরিকল্পনার অনুমোদন দেয় সরকার। ২৯১ একর আয়তনের এ দ্বীপটিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল ও ইকো কটেজ, যাতায়াতের জন্য ক্যাবল কার, ঝুলন্ত সেতু ও ভাসমান জেটি নির্মাণের কথা রয়েছে অনুমোদিত মহাপরিকল্পনায়। দ্বীপকে আকর্ষণীয় করতে এ পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে শিশুপার্ক, পানির নিচের রেস্তোরাঁ, ভাসমান রেস্তোরাঁসহ পর্যটকদের উপযোগী বিভিন্ন স্থাপনা।

বেজা সূত্র জানায়, সম্ভাব্যতা যাচাই, মাটি ভরাট, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে ইতোমধ্যে আনুমানিক ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এরমধ্যে ২০২২ সালের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১৯৬২ সালের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্মরণ করিয়ে নাফ নদী থেকে বালি উত্তোলনে আপত্তি জানায় মিয়ানমার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের আপত্তির বিষয়টি বেজাকে জানায়। এ সময় মাটি ভরাটের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স। এ ঘটনার পর বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন গত মাসে নাফ ট্যুরিজম পার্ক পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে ফিরে তিনি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘দ্বীপটি এখন মহিষের চারণভূমি। বর্তমানে সেখানে উন্নয়নকাজ বন্ধ আছে।’

জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘এখানে এখন কোনো বাধা বা আপত্তি নেই। আমরা বালি না পাওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি। এছাড়া বালি উত্তোলনসহ পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ প্ল্যান বাস্তবায়নের একটি গাইডলাইন দিবে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের দয়ানন্দ বাবু ভালো বলতে পারবেন।’

তাঁর পরমর্শ অনুযায়ী বেজার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দয়ানন্দ দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একটা স্টাডি চলছে। পাশাপাশি আমরা ডেভেলপার (উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান) খুঁজছি। ডেভেলপার পেলে তারা নিজেদের মতো করে পুরো পার্কটির কাজ করবে। এতে পরিকল্পনায় সামান্য কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। কেননা কেউ যদি এ পার্ক উন্নয়নের দায়িত্ব নেয়, তাহলে তাদের কিছু ডিমান্ড তো থাকতেই পারে। অন্যথায় সরকার নিজে অর্থায়ন করতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হবে। তবে আমরা ডেভেলপার খোঁজায় জোর দিচ্ছি।’

এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার বলেন, ‘টেকনাফের উন্নয়ন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা অনেক বেশি। এখানে সাবেরাং একটি পার্ক হচ্ছে। নাফ ট্যুরিজম পার্কের কাজও সরকার হাতে নিয়েছে। এগুলো শেষ হলে টেকনাফের চেহারা পাল্টে যাবে। আমার সংসদীয় অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশের পর্যটন শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page