রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

নির্বাচনে হেরে ‘বেগম সাহেবাকে’ এমপি বানানোর ব্যবসায় নদভী!

নির্বাচনে হেরে ‘বেগম সাহেবাকে’ এমপি বানানোর ব্যবসায় নদভী!

“২০২০ সালের দিকে কীভাবে জানি দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছিলেন রিজিয়া রেজা। পরে সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। ওনি কীভাবে মনোনয়ন চান? দলের জন্য, আওয়ামী নেতাকর্মীদের জন্য কী করেছেন তিনি? ১০ বছরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যেসব করার কথা ওনি বলছেন, তা স্বামীর রাজত্ব টিকিয়ে রাখতেই করেছেন। গেল নির্বাচনে গো-হারা হেরে এখন নতুন ব্যবসার সুযোগ খুঁজছেন দুজনই”-সাতকানিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা বেগম ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে হেরে আওয়ামী লীগের আলোচিত সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এবার নিজের বেগম সাহেবাকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি বানাতে ছোটাছুটি করছেন।

এমন গুঞ্জন চাউর হচ্ছে চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে। আর এই গুঞ্জনে ঘি ঢাললেন বিদায়ী এমপিপত্নী রিজিয়া রেজা চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দলের জন্য, দেশের জন্য নারীদের নিয়ে আরো কাজ করার আগ্রহে আছে। সে হিসেবে আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী।

রিজিয়া রেজা চৌধুরী বলেন, আমি ১০ বছর সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নারীদের জন্য কাজ করেছি। আওয়ামী লীগের পক্ষে, নৌকার পক্ষে জনমত গঠন করেছি। রোদে-পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে শেষ পর্যন্ত আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। আমি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের দুই দুইবারের মেম্বার। দেশের জন্য, দলের জন্য, নারীদের জন্য আরো কাজ করার ইচ্ছে আছে। সেজন্য আমি সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাইবো।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোনয়ন কে পাবেন সেটি নির্ধারণ করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। অনেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন, যাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আছে। তবে কে কী হবেন সেটি বলার কোনো অবকাশ আর কারো নেই।’

তবে খুব সহজে তাঁর আকাঙ্খা মিটছে না বলে মনে করছেন দলের নদভীবিরোধী নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, নদভীর রাজনৈতিক পথ আগের মতো আর সুগম নয়। যদিও নদভী অনুসারীদের ধারণা, কোনো না কোনোভাবে ড. আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী ও তাঁর স্ত্রী নিজেকে থিতু করে নেবেন, নইলে রাজনীতির মাঠে অস্তিত্ব বিলীন হবে তাঁদের। তারা বলছেন, নদভীর হাত অনেক দূর পর্যন্ত লম্বা। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে তিনি দল ও দলের বাইরে যেখানে যাওয়ার দরকার সেখানেই যাবেন!

তবে নদভীপত্নী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর সংসদে যাওয়ার পথে বাধা হিসেবে দেখছেন তার ‘জামায়াতি’ পরিবারকে। প্রয়াত জামায়াত নেতা মমিনুল হক চৌধুরীর কন্যা তিনি। এমপিগিরির আমল ছাড়া আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ২০২০ সালের দিকে কীভাবে জানি দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছিলেন রিজিয়া রেজা। পরে সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। ওনি কীভাবে মনোনয়ন চান? দলের জন্য, আওয়ামী নেতাকর্মীদের জন্য কী করেছেন তিনি? ১০ বছরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যেসব করার কথা ওনি বলছেন, তা স্বামীর রাজত্ব টিকিয়ে রাখতেই করেছেন। গেল নির্বাচনে গো-হারা হেরে এখন নতুন ব্যবসার সুযোগ খুঁজছেন দুজনই।

নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৪ সালে আবু রেজা নদভী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন নদভীপত্নী রিজিয়া রেজা চৌধুরী। শুরুতে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান। পরে অবশ্য ওই পদ থেকে বিতর্কের মুখে সরিয়ে নেওয়া হয় তাকে। এর পর তাকে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত করে কেন্দ্র। এরপরই নদভীপত্নীর বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়ে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া দুই উপজেলাজুড়ে। তিনি মহিলা সমাবেশ ও নারী শোভাযাত্রার মত কর্মসূচি এবং মহিলা উন্নয়ন ফোরাম ও সামাজিক প্রতিরোধ ফোরামসহ বিভিন্ন ব্যানারে সরগরম রাখতেন রাজনীতির মাঠ। এমপিপত্নী হিসেবে বিভিন্ন পক্ষ তাকে মেইনটেইন করে চলত। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ওই এলাকায় তাঁর হাত ধরেই অনেক নারী আওয়ামী রাজনীতির মাঠে নেমেছেন।

এরপরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেব চৌধুরীর পক্ষে গণজোয়ারে নৌকায় চড়েও টিকতে পারেননি দুবারের এমপি ড. আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী। ওই আসনে বিপুল ভোটে এমপি হয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি এম এ মোতালেব সিআইপি।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page