সুুন্দর ও রুচিশীল অনুষ্ঠানমালা, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনসহ ঈদে ঢাকার বাইরে একমাত্র রাষ্ট্রীয় চ্যানেল হিসেবে দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে বিটিভি চট্টগ্রাম। গত কয়েক মাসের দৃশ্যমান পরিবর্তনে সুনাম কড়িয়েছেন সর্বমহলের। চ্যানেলটির স্ক্রিন, ব্যাকগ্রাউন্ড, কনটেন্ট, পরিবেশনা সবকিছুর সম্প্রতি এমন পরিবর্তন হয়েছে যে আগের সাথে কোনোভাবেই মেলানো যায় না।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে এখন আর আগের মতো শুধু নির্দিষ্ট শিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান তৈরি করা হয় না। সুযোগ দেয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিভাবান শিল্পীদেরও। ফলে চট্টগ্রামের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে একটি সহায়ক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে কেন্দ্রটি। তাই প্রতিভাবানরা নিজেদের সৃষ্টিশীলতা ও সাংস্কৃতিক প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন হাতের কাছেই।
বিটিভি চট্টগ্রামের নিয়মিত দর্শক, শিল্পী, সংবাদকর্মী ও কলাকৌশলীরা জানান, তথ্য পরিবেশন, শিক্ষার প্রসার, উন্নয়ন কর্মকান্ডে সকলকে উদ্বুদ্ধকরণ ও নির্মল আনন্দদান এ চারটি মূলনীতিকে সামনে রেখে যে চ্যানেলটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই চ্যানেলটি আজ বিষদ পরিসরে। তবে এগিয়ে চলার গতি সম্প্রতি বেড়েছে বহুগুণে। কেন্দ্রটির অনুষ্ঠান ও সংবাদের গুণগতমান বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিক কার্য্যক্রমেও এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন।
সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলা সংবাদে যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য সংবাদ প্রচার। আর সংবাদ বিরতিতে প্রচার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন। দর্শকদের কথা মাথায় রেখে সংবাদ ও প্রতিবেদনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। সীমিত বাজেটের মধ্যেও গত ঈদ-উল-ফিতরে ৬৬৭ এবং ঈদ-উল-আযহায় ৬৫১ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে। নিয়মিত এবং বিশেষ অনুষ্ঠানেও একদিকে যেমন সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে তেমনি গুণগত মানও নজর কেড়েছে সবার। দেশের সুপরিচিত ও গুণী শিল্পীদের অংশগ্রহণে আগের চেয়ে অনেক বেশি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে বিটিভি চট্টগ্রাম ।
এখন নিয়মিতই ভিন্ন আঙ্গিকে নান্দনিক অনুষ্ঠান নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য দু’টি স্টুডিওকে সংস্কার করে আধুনিক রুপও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ভার্চুয়াল স্টুডিও স্থাপন কার্যক্রম। তাছাড়া এখন অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক সেট, লাইট ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মাধ্যমে। সেই সাথে আধুনিক স্টুডিও স্থাপনের জন্য দশতলা ভবনের নির্মাণ কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিটিভি চট্টগ্রামের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) নূর আনোয়ার রনজু’ বলেন, আগে কেন্দ্রটি থেকে অনুষ্ঠান প্রচারের পর সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ও দর্শকরা পরবর্তীতে পছন্দের অনুষ্ঠানগুলো দেখতে ব্যর্থ হতেন। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠান সংরক্ষণের জন্য সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত আপলোড করা হচ্ছে অনুষ্ঠানগুলো।
তিনি বলেন, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে যাতে করে কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ও সংবাদের মান আরো উন্নত করা যায় এবং বৃদ্ধি করা যায় কেন্দ্রে আগত শিল্পী, কলাকুশলী ও অতিথিদের সেবার মান। একটি প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের জন্য সেবাগ্রহীতাদের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেবার বিষয়টি মাথায় রেখে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও কলাকুশলীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ-আপত্তি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তিকল্পে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মানী প্রদান প্রক্রিয়া। সময়মতো শিল্পী সম্মানী প্রদান না করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কঠোরভাবে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে।
অন্যদিকে সম্মানী প্রাপ্তি স্বচ্ছ, সহজ ও সুবিধাজনক করার জন্য ইলেক্ট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (ইএফটিএন)-এর মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আরো যেন কত কিছুই হচ্ছে এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামের দর্শক ও শিল্পীরা বলেন, বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) নূর আনোয়ার রনজু যোগদান করার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানে একের পর এক পরিবর্তন হচ্ছে। ঢেলে সাজিয়েছে বিটিভি চট্টগ্রামকে। নিজের সব দক্ষতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাজ করছে শিল্পীরা আর সুন্দর, রুচিশীল অনুষ্ঠান ও সংবাদ দেখে খুশি দর্শকরা। তারা চায় এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।
You cannot copy content of this page