রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার, আছে কোটি টাকা জরিমানার বিধান!

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ, কম্পিউটটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষতি, সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অজামিনযোগ্য চারটি ধারা রেখে বহুল আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ পাস হয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে বিলের ৪২ ধারা অনুযায়ী সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশী ও গ্রেফতারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। সাইবার সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জারিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে এই আইনে দ্বায়েরকৃত মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে সে জন্য বাদীকে শাস্তি পেতে হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

এরআগে বিরোধী দলের সদস্যদের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তারা বিলের ৪২ নম্বর ধারাসহ বেশকিছু ধারার বিষয়ে আপত্তি জানান এবং আগামীতে আইনের অপপ্রয়োগ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। তবে ডিজিটাল ব্যবস্থায় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে বিলটি পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলার পর এটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। ওই বিলের ৪২ নম্বর ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া ছিল পুলিশকে। এখানে সংশোধনী এনে বলা হচ্ছে, এই ধারায় সাব ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক (ইনপেক্টর) পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেফতার করতে পারবেন। এই বিষয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আপত্তি জানালেও তা বহাল রাখা হয়েছে।

বিলের মিথ্যা মামলা সংক্রান্ত ৩৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ওই ব্যক্তি মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সে দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলে বলা হয়েছে, যদি এই আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে ওই ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে মূল অপরাধের জন্য যে দণ্ডের পরিমাণ বেশি হয় সেটাই দণ্ডের পরিমাণ হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে। কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল এই অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবেন বলে বিলে যুক্ত করা হয়েছে।

বিলের ২১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অনলাইন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রপাগান্ডা ও প্রচার বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। এই ধারায় কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দ্রুত হইবেন।’

বিলের জামিন অযোগ্য ১৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে (ক) বে-আইনি প্রবেশ বা (খ) বে-আইনি প্রবেশের মাধ্যমে উহার ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন অথবা করিবার চেষ্টা করেন, অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।’ (ক) ধারায় অপরাধে অনধিক ৩ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং (খ) ধারায় অপরাধে অনধিক ৬ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

জামিন অযোগ্য ১৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো (ক) কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হইতে কোনে উপাত্ত, উপাত্ত ভাঙার তথ্য বা উহার উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করেন, বা স্থানান্তরযোগ্য জমাকৃত তথ্য-উপাত্তসহ উক্ত কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করেন বা কোনো উপাত্তের অনুলিপি বা অংশ বিশেষ সংগ্রহ করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।’ এছাড়া আরো কয়েকটি বিষয়কে এই ধারায় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এই ধারায় সংঘটিত অপরাধের শাস্তি অনধিক ৭ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

জামিন অযোগ্য ২৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা উহার কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করিবার অভিপ্রায়ে কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা বে-আইনি প্রবেশ করেন তা হইবে সাইবার সন্ত্রাস অপরাধ।’ এছাড়া আরো কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এই ধারার অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হইবেন।’

এছাড়া জামিন অযোগ্য ৩৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করেন, তাহা হইলে উহা হবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১৪ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ এই ধারায় ‘হ্যাকিং’-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘(ক) কম্পিউটার তথ্য ভাণ্ডারের কোনো তথ্য বিনাশ, বাতিল, পরিবর্তন বা উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাসকরণ বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিসাধন; বা (খ) নিজ মালিকানা বা দখলবিহীন কোনো কম্পিউটার, সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে উহার ক্ষতিসাধন।’

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page