গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ইং, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ইং ও ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ইং তারিখে 'দৈনিক ঈশান' পত্রিকায় "কমিশন-র্স্ক্যাপ সব খান তবুও সাধু রেল কর্মকর্তা সাজ্জাদ", "চট্টগ্রামে রেলের শতকোটি টাকার র্স্ক্যাপের গোপন ভান্ডার" ও "চট্টগ্রামে রেলের র্স্ক্যাপের গোপন ভান্ডার খোঁজে পেল দুদক টিম" শিরোনামে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রতিবাদপত্র পাঠালেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তিন কর্মকর্তা।
এরা হলেন 'জনাব মো. সাজ্জাদুল ইসলাম, জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সরঞ্জাম শাখা), পাহাড়তলী, জনাব সৈয়দ মো. আমীর উদ্দিন, যন্ত্র প্রকৌশলী (সদর) (পূর্ব), সিআরবি, চট্টগ্রাম এবং জনাব রফিক উল্লাহ, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শন)"। গত ৫ অক্টোবর ২০২৫ইং তারিখে তিন কর্মকর্তার স্বাক্ষরযুক্ত ২১০৫ শব্দের তিনপৃষ্ঠা প্রতিবাদপত্রে তারা প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য, ভুল নাম ও পদবি ব্যবহার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অযাচিতভাবে মানহানির সর্বোচ্চ অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। একইসাথে এ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ ব্যক্ত করে মিথ্যা ও অসঙ্গতিসমূহের সত্য উন্মোচনের জন্য তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন। যার ১ম পর্ব গত ৮ অক্টোবর দৈনিক ঈশানে প্রকাশ করা হয়েছে। আজ ১৪ অক্টোবর শেষ পর্ব প্রকাশ করা হলো :
ধারাবাহিক প্রতিবেদন-১ এর মতো ধারাবাহিক প্রতিবেদন-২ ও দুদকের অভিযানের সংবাদের প্রতিবাদও করেছেন তিন রেল কর্মকর্তা। যা ৬ প্যারায় লিখেছেন। অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় প্যারাগুলো সমন্বয় করে প্রকাশ করা হলো :-
ক+গ প্যারার বিবরণমতে রেলওয়ে পাহাড়তলী ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা হতে প্রতিদিন ক্রমান্বয়ে ময়লার গাড়িতে করে র্স্ক্যাপ পাচার করা হচ্ছে মর্মে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা একটি স্বতন্ত্র দপ্তর। যান্ত্রিক বিভাগের বিধি বিধান ও নিয়মানুযায়ী ঐ দপ্তর পরিচালিত হয়। ঐ দপ্তরে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সরঞ্জাম শাখা), পাহাড়তলী দপ্তরের কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করার বিধিগত সুযোগ নেই।
খ প্যারায় বলা হয়েছে মো. সাজ্জাদুল ইসলাম, আসাদুল্লাহ শরীফ, মো. আলমগীর কবির ও জনাব মো. আমিনুল ইসলাম এ সকল কর্মকর্তাদের তরিৎ কার্যক্রমে এলইডি বাল্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়মটি প্রকাশ পায় এবং দায়ী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। এছাড়া এসকল কর্মকর্তাগণ একইভাবে ডিপোর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডিপার্টমেন্টাল স্টক ভেরিফিকেশন স¤পাদনের সময় অন্যান্য ওয়ার্ডে বাড়তি মালামাল থাকার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। এ ধরণের কর্মকান্ডের জন্য আলোচ্য কর্মকর্তাগণ প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। অথচ প্রতিবেদক তারহীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জনাব মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম'কে ভুলভাবে তথ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন যা দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক মানহানির শামিল।
ঘ+ঙ প্যারায় বলা হয়েছে প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে মালামাল বোঝাইকৃত বিভিন্ন বিকেসি এবং এসসিটি ওয়াগন নম্বর উল্লেখ করেছেন। এ সকল ওয়াগন নম্বর স¤পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য উপাত্ত জানতে চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রদান করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। ওয়ার্কসপে প্রতিনিয়ত র্স্ক্যাপ তৈরি হয় এবং র্স্ক্যাপ বিক্রি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স¤পাদিত হয় বিধায় এ কাজটি সময় সাপেক্ষ এবং বিক্রয়াদেশ না হওয়া পর্যন্ত র্স্ক্যাপ ডেলিভারী সম্ভব না হওয়ায় ওয়ার্কসপের বিভিন্নসপে কাজের সুবিধার্থে বিকেসি ওয়াগনে লোড করা হয়েছে যেগুলো স¤পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছে। এছাড়া ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা এবং ডিজেলসপ দুইটি আলাদা দপ্তর। ঐ দপ্তর দুইটি যান্ত্রিক বিভাগের বিধি বিধান ও নিয়মানুযায়ী পরিচালিত হয়। সেখানে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সরঞ্জাম শাখা), পাহাড়তলী দপ্তরের কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করার বিধিগত সুযোগ নেই।
চ প্যারায় বলা হয়েছে জনাব মো. সাজ্জাদুল ইসলাম'কে "..... আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর। আর ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর সরকারের পরিবর্তনের পর তিনি হয়ে যান বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত অফিসার" হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী কোন সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই। সে মোতাবেক জনাব মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম তার কর্মজীবনে কখনোই কোন ধরণের রাজনীতির সাথে স¤পর্কযুক্ত ছিলেন না।
ধারাবাহিক প্রতিবেদন-৩ নামে "চট্টগ্রামে রেলের র্স্ক্যাপের গোপন ভান্ডার খোজে পেল দুদক টিম" এর অসঙ্গতিসমূহ নিম্নে উল্লেখ করে প্রতিবেদনগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য দিয়ে প্রস্তুত করেছেন যা বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ সকল হীন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন তারা।
প্রতিবেদকের বক্তব্য :
প্রতিবাদপত্রে ক+গ প্যারায় রেলওয়ে পাহাড়তলী ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানায় র্স্ক্যাপের গোপন ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে। যা সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা স্বতন্ত্র দপ্তর দাবি করা হলেও দপ্তরগুলোর কোন কর্মচারী অনৈতিক কোন কর্মকান্ডে যুক্ত থাকলে ঐ কর্মচারীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, করছেন এবং ভবিষ্যতেও করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ স্ব-বিরোধী ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার বহি:প্রকাশ
খ প্যারায় এলইডি বাল্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম প্রকাশ পায় প্রতিবেদনে তাই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতেন। কিন্তু প্রকাশ হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে চোর থেকে জমিদার সাজার চেষ্টা করেছেন মো. সাজ্জাদ। প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে।
ঘ+ঙ মতে প্রতিবেদন-২ নজরে এলে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। অভিযানে প্রতিবেদনের তথ্যচিত্র মোতাবেক বিকেসি নম্বরসহ র্স্ক্যাপের সাথে মুল্যবান যন্ত্রাংশেরও গোপন ভান্ডার উম্মোচন হয়। যা দুদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ রেলের যথাযথ কর্মকর্তাদের অসহযোগীতার কারণে মূল্যবান যন্ত্রাংশের বিষয়টি প্রতিবেদক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে পারেনি। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কোন কথাই বলেননি সাজ্জাদুল ইসলাম। আর নিজের দোষ ঢাকতে এখন তথ্য প্রদানে প্রস্তুত রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা হাস্যকর।
চ মতে, জনাব সাজ্জাদুল ইসলাম নিজেকে কোনরকম রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত নেই বলে দাবি করেছেন। যদি তাই হয় তাহলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সুবিধাভোগী কতিপয় রাজনৈতিক দূর্বৃত্ত প্রতিবেদককে প্রাণনাশের হুমকি দিলেন কার স্বার্থে, তার জবাব চেয়েছেন প্রতিবেদক।
এদিকে ধারাবাহিক প্রতিবেদন-৩ এর প্রতিবাদপত্রও পাঠিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। অথচ এখন প্রতিবেদন-৩ নামে কোন কিছুই ছিল না। এটি ছিল প্রতিবেদনের ফলোআপ। প্রতিবাদপত্রে স্বাক্ষরকারী তিন কর্মকর্তার একজনও যে, ধারাবাহিক প্রতিবেদন বা ফলোআপ চিনেন না তা বিস্ময়কর। বরং হীনস্বার্থ চরিতার্থকারী তিন কর্মকর্তার লালিত আন্ডারগ্রাইন্ড লেবেলের কোন সাংবাদিকের পরামর্শে অনিয়ম-দূর্নীতির সংবাদ/প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত রাখার অপপ্রয়াস এই প্রতিবাদপত্র, এটা সহজেই অনুমেয়। যা স্বাধীন সাংবাদিকতায় দূর্বৃত্তের কালো থাবা বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, পেশাগত দায়িত্বের কারণে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। রেল কর্মকর্তাদের মান বা সম্মানহানির জন্য নয়। রেল কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিবেদকের কোনরকম ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিরোধ নেই। রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিবেদক।
You cannot copy content of this page