
বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম তারকা ঋতুপর্ণা চাকমা যখন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য এনে দিচ্ছেন, তখন তার পরিবার চরম দারিদ্র্য ও করুণ বাস্তবতায় দিন কাটাচ্ছে। তার মা ভূজোপতি চাকমা দীর্ঘদিন ধরে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না।
রাঙামাটি সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ি গ্রামে, যেখানে ঋতুপর্ণার বাড়ি। সাফ জয় পরবর্তী সময়ে যে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল পাকা রাস্তা, নতুন ঘর বা সরকারি চাকরি তবে তা এখনো অধরা।
ঋতুপর্ণার বোন পাম্পী চাকমা জানান, মা এখনো জানেন না তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ঋতু ছাড়া পরিবারে উপার্জনের আর কেউ নেই। ভাই মারা গেছে, তিন বোন বিবাহিত হলেও সবাই অর্থকষ্টে দিন পার করছে।
মা ভূজোপতি চাকমা বলেন, মেয়ের খেলা দেখে গর্ব হয়। কিন্তু এখনো আমরা কষ্টে আছি। সরকার ঘর, রাস্তা আর চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও কিছুই হয়নি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঋতুপর্ণার মায়ের চিকিৎসা ও নতুন ঘরের ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, তার মায়ের চিকিৎসায় সহায়তার জন্য আমরা প্রস্তুত। ঘর নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
২০১৫ সালে বাবার মৃত্যু ক্যান্সারে হলেও সেই অনুপ্রেরণায় ঋতুপর্ণার ফুটবলে আগমন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যয়নরত। ২০২৪ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত গোলেই বাংলাদেশ জয়ী হয়। এরপর মিয়ানমারের বিপক্ষেও তার জোড়া গোলে দল জয় পায়।
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক বীর সেন চাকমা বলেন, ঋতুপর্ণার মতো একজন তারকা খেলোয়াড়ের পরিবার যদি এমন দুর্দশায় থাকে, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু ঋতু নয়, পাহাড়ের আরও অনেক প্রতিভাবান মেয়েরা যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।