কুষ্টিয়ায় বিএনপির অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া এবং সেখানে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে চরমভাবে কটাক্ষ করেছেন আলোচিত ও বিতর্কিত আরেক নায়িকা পরীমনি। অপুকে পল্টিবাজ এবং সুবিধাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এ নিয়ে একটা পোস্ট দেন পরীমনি। সেখানে তিনি অপু বিশ্বাসের রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম পালনের বিষয়টি টেনে এনে তাকে কটাক্ষ করেছেন।
পরীমনি লিখেছেন, ‘আগে ছিল ৬ মাস হিন্দু, ৬ মাস মুসলিম। এখন ৬ মাস আওয়ামী লীগ ৬ মাস বিএনপি। পল্টিবাজ, সুবিধাবাদী কারে বলে দিদি কিন্তু দেখিয়ে দিলেন। বাপরে বাপ কী জিনিস এটা।’
যদিও পোস্টে কারও নাম উল্লেখ করেননি একাধিক বিয়ে ও মাদক মামলায় হাজতবাস করে তুমুল বিতর্কে জড়ানো এই নায়িকা। তবে নেটিজেনদের বুঝতে বাকি নেই যে, পরীমনি পোস্টটি অপু বিশ্বাসকে ইঙ্গিত করেই দিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর চিত্রনায়ক নিরব হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়ার খোকসায় আয়োজিত বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শোডাউন, ভোজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন অপু বিশ্বাস। সেখানে তিনি বক্তব্যও দেন।
বক্তব্যকালে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘সেই ঢাকা থেকে সাত ঘণ্টা জার্নি করে এসেছি আপনাদের সঙ্গে দেখা করব এবং কথা বলব বলে। আমি শিল্পী, এটাই আমার পরিচয়। এই পরিচয়ে দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি। এজন্য আপনাদের কাছাকাছি আসি। জানতে পেরেছি আপনারা সেই দুপুর ১২টা থেকে গরমের মধ্যে বসে আছেন। এটা আসলে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’
অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি বগুড়ার মেয়ে। এর আগে রাজবাড়ী এসেছিলাম, কিন্তু খোকসা আসা হয়নি। এখানে আনার জন্য প্রাণপ্রিয় বড় ভাই রিপন ভাইকে (স্থানীয় বিএনপি নেতা) ধন্যবাদ জানাই। রিপন ভাই আপনাদের সেবা করতে চান। আমি চাইব, সেই সুযোগ আপনারা করে দেবেন।’
অপু আরও বলেন, ‘যে মানুষ আপনাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিতে চায়, আমি মনে করি তার থেকে আর বড় মনের মানুষ হতে পারে না। আপনারা তাকে যে ভালোবাসা ও সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন, আমি চাইব তিনি যেন লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন। আপনারা বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে থাকবেন।’
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হতে দুইবার মনোনয়নপত্র কেনেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের প্রাক্তন স্ত্রী অপু বিশ্বাস। প্রথমবার ২০১৯ সালে। সে বার শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পাননি আলোচিত এই নায়িকা। অর্থাৎ, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ফের আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়নপত্র কেনেন অপু বিশ্বাস। কিন্তু দ্বিতীয় চেষ্টায়ও এমপি হওয়ার খায়েশ পূরণ হয়নি তার।
শুধু মনোনয়ন চাওয়া নয়, আওয়ামী লীগের যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং প্রচার-প্রচারণার অগ্রভাগে সবসময় দেখা গেছে অপু বিশ্বাসকে। এছাড়া মাত্র ১০০ টাকা পারিশ্রমিকে একটি সিনেমায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন। যদিও পরে সিনেমাটি থেকে সরে দাঁড়ান।
পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে তোলা একটি ছবি বহুদিন ধরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজের প্রোফাইলে দিয়ে রেখেছিলেন অপু বিশ্বাস। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ‘নারী উন্নয়নের প্রতীক’ বলে মুখে ফেনাও তুলতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাসিনার সঙ্গের সেই ছবিটি প্রোফাইল থেকে সরিয়ে ফেলেন তিনি।
সেই আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ অপু বিশ্বাসের বিএনপির অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠা খুবই স্বাভাবিক। এ নিয়ে এরইমধ্যে নানা মহলে হইচই শুরু হয়েছে। গালে হাতে দিয়ে ভাবতে বসেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। অপুকে যারা আমন্ত্রণ করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে।