সোয়া কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর স¤পদের মালিক অবসরপ্রাপ্ত এএসপি পত্নী তাহেরিনা বেগম (৫১)। পেশায় তিনি চট্টগ্রামের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। কীভাবে তিনি এত স¤পদের মালিক জানতে চান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তাতে তিনি লিখিত উত্তর দেন, বুটিক ব্যবসা থেকে তার আয়ের কথা। অথচ দুদক বলছে-বাস্তবে এমন কোনো ব্যবসার নথিপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর অবৈধ আয়ের টাকায় এত স¤পদের মালিক হয়েছেন তিনি। ওই পুলিশ কর্মকর্তারও প্রায় সোয়া কোটি টাকার স¤পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
বৃহ¯পতিবার (৪ জুলাই) এ দ¤পতির বিরুদ্ধে আলাদাভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এ। দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ মামলা দুটি দায়ের করেন।
দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমার কার্যালয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা শুধু মামলা রেকর্ড করেছি। সমন্বিত কার্যালয় থেকে মামলা তদন্ত হবে।
দুটি মামলার মধ্যে একটিতে অবসরে যাওয়া সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আবুল হাশেমকে (৬১) আসামি করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা ২০২২ সালে চট্টগ্রামে শিল্প পুলিশের সিনিয়র এএসপি পদ থেকে অবসরে যান। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান থানার গশ্চি গ্রামের গুরা মিয়া সেক্রেটারি বাড়ি এলাকায়।
আরেক মামলায় তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে (৫১) আসামি করা হয়েছে। তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মেরনসান কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তারা নগরীর খুলশী থানাধীন পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডের রূপসী হাউজিংয়ে থাকেন।
মামলার এজাহারের তথ্যানুযায়ী, দুদকের হটলাইনে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর আবুল হাশেম ও তার স্ত্রীকে স¤পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেয় দুদক। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর তারা পৃথকভাবে স¤পদ বিবরণী দাখিল করেন।
স¤পদ বিবরণীতে আবুল হাশেম মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর স¤পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক অনুসন্ধান করে তার নামে ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর স¤পদের তথ্য পায়। অর্থাৎ তিনি মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা স¤পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। দুদক তার গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। এ হিসেবে তার দেওয়া স¤পদের বিবরণ অনুযায়ী তিনি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত স¤পদ অর্জন করেন।
দুদক আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকার স¤পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বর্হিভূত ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার স¤পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেছে।
অন্যদিকে স্ত্রী তাহেরিনা বেগম স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৬ টাকা স¤পদ অর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুদক অনুসন্ধান করে তার মোট ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর স¤পদের তথ্য পায়। এর মাধ্যমে তাহেরিনা বেগম তার স¤পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা গোপন করেন। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে তার গ্রহণযোগ্য আয় মিলেছে ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। তাহলে তিনি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স¤পদ অর্জন করেছেন।
দুদক তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকার স¤পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বর্হিভূত ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার অবৈধ স¤পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা করেছে।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, আবুল হাশেম ও তার স্ত্রী বর্তমানে খুলশী থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সড়কে রূপসী হাউজিং আবাসিক এলাকার একটি বাসায় থাকেন। সেই চারতলা ভবনটি তাদের যৌথ নামে আছে। তাহেরিনা বেগম ভবন তৈরিতে ব্যয়ের টাকা কীভাবে পেয়েছেন, সেটা অনুসন্ধান করে দুদক।
তাহেরিনা বুটিক ব্যবসা ও টিউশন থেকে আয়ের কথা বলেছেন। কিন্তু বুটিক ব্যবসার কোনো বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারেননি। এর থেকে সহজেই বোঝা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম নিজের অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে সেগুলো পর¯পরের যোগসাজশে বৈধ করার কৌশল নিয়েছিলেন।
স্বামীর অবৈধ অর্থ ভোগদখলে রাখতে সহযোগিতা করায় তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে মামলায় দুদক আইনের পাশাপাশি দন্ডবিধির ১০৯ ধারায়ও অভিযোগ আনা হয়েছে।
You cannot copy content of this page