সোমবার- ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর 

বৈঠকের পরও অবরোধ কর্মসূচিতে অনড় স্কপ, রক্ষা পরিষদের প্রত্যাহার

বৈঠকের পরও অবরোধ কর্মসূচিতে অনড় স্কপ, রক্ষা পরিষদের প্রত্যাহার

বিদেশি কোম্পানিকে চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়া নিয়ে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া দুই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বৈঠকে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না হওয়ায় অবরোধ কর্মসূচিতে অনড় থাকার ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।

অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়ে আপাতত কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ এবং এরপর স্কপ নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমডোর কাওছার রশিদ বলেন, আন্দোলনকারী দুটি পক্ষের সঙ্গে আমরা আলাদাভাবে বসেছিলাম। আমরা উনাদের বলেছি যে, ভাই যে কোনোভাবে আমাদের পোর্ট চালাতে হবে। বন্দরের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। উনাদের বিবেচনা করতে বলেছি। উনারা খুব পজেটিভ। দেখা যাক কী হয়!

তিনি জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ উভয় সংগঠনকে একসঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীদের মূল সংগঠন স্কপ নেতারা এতে আপত্তি জানান। বন্দর নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ ব্যানারে মহলবিশেষের সক্রিয় হওয়াকে স্কপ সন্দেহের চোখে দেখছে। ফলে তারা আলাদাভাবে বৈঠকের প্রস্তাব দিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মতি দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কপ নেতা ও চট্টগ্রাম জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি তপন দত্ত বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের আহ্বানে আমরা বৈঠকে গিয়েছিলাম। স্কপের পক্ষে আমি এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ স¤পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

আরও পড়ুন :  খুনোখুনিতে চট্টগ্রামে বালু তোলা ও বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা

আমরা গিয়ে দেখলাম, উনারা (বন্দর রক্ষা পরিষদ) আগে থেকে সেখানে বসে আছেন। আমরা একসঙ্গে বৈঠকে বসতে চাই না, এটা জানালাম। কারণ, হঠাৎ করে তাদের ঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচির বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। আমরা সেটা আমাদের মতো করে বলব। মিসলিড যাতে না হয়, সেজন্য আমরা আলাদা বসেছি।

বৈঠকে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তপন দত্ত বলেন, বৈঠকে উনারা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তবে চুক্তিসংক্রান্ত কিছু খোলাসা করেননি। উনারা বলেছেন যে, এটা আগের সরকারের সিদ্ধান্ত, আগের সরকারই সবকিছু করে গেছে, আমরা শুধুমাত্র ধারাবাহিকতা বজায় রাখছি। আমাদের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য উনারা কোনো চাপ দেননি। এটা শুধু বলেছেন যে- বন্দরের ক্ষতি হয় এমন কিছু যেন না করি।

উনারা বলেছেন, ২৬ তারিখ তো এনসিটির বিষয়ে কোর্টের একটা রায় হবে, সেটা আপনাদের পক্ষে যাবে। আমরা বললাম, রায় আমাদের পক্ষে যাবে- এটা আপনারা কিভাবে জানলেন? বিপক্ষেও তো যেতে পারে। তবে আপনারা যদি প্রকৃতই আন্দোলনের বিষয়ে কনসার্ন হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের লিখিতভাবে বলেন যে, আপনারা ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কোনো চুক্তি করবেন না, এনসিটিটা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেবেন না। উনারা সেটা দিতে সম্মত হননি, এ বিষয়ে সরাসরি কোনো জবাবও দেননি। তারপর লালদিয়ার চর ও পানগাঁও বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। উনারা এ বিষয়ে তেমন কোনো কথা বলেননি।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে ব্যারাকের বাথরুম থেকে এএসআইয়ের লাশ উদ্ধার

এ অবস্থায় পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচিতে অনড় থাকার কথা জানিয়ে তপন দত্ত বলেন, বৈঠকে যেহেতু ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে। আগামী বুধবার হালিশহর টোল প্লাজার প্রবেশমুখ, বড়পোল ও মাইলের মাথা- এ তিনটি ¯পটে সর্বাত্নক অবরোধ হবে। আগে আগ্রাবাদ ¯পট ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটা পরিবর্তন করে হালিশহরে নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে বামপন্থীরা যুক্ত হয়েছেন, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবীরা যুক্ত হয়েছেন। ছাত্র, যুব, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিকরাও যুক্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় আমাদের পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমী, সদস্য সচিব ও বিভাগীয় শ্রমিক দলের সদস্য মো. হুমায়ুন কবীর, নাগরিক ঐক্যের স্বপন মজুমদার এবং গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সমন্বয়ক চিরন্তন চিরু অংশ নেন।

আরও পড়ুন :  ইজারা প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধের ডাক

চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য হাসান মারুফ রুমী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বৈঠকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তারা এনসিটি ও সিসিটি ইজারার প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না। আমরা এতে আশ্বস্ত হয়েছি। এজন্য আপাতত আজকের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছি।

উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩৩ বছরের চুক্তি করেছে সরকার। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে চুক্তিতে। একইদিন কেরাণীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ২২ বছর মেয়াদে পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এছাড়া বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালও (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে সরকারের।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া বন্ধে ২২ নভেম্বর শনিবার চট্টগ্রামে এক শ্রমিক কনভেনশন থেকে ২৬ নভেম্বর বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশমুখী সকল সড়ক সর্বাত্নক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে স্কপ।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বন্দরের আশপাশে তিনটি ¯পটে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল, যা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page