Skip to content

বৃহস্পতিবার- ৫ জুন, ২০২৫

প্রাইভেটকার দূর্ঘটনা

ভয়ে কাতর দুই মেয়ে, বাবার শোকর আদায়

গত শনিবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভাড়ায় চালিত একটি প্রাইভেটকারে বাড়ি ফিরছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলার দুবাই প্রবাসী আবু বক্কর। সাথে ছিলেন বড় মেয়ে আদিবা হোসেন ও তার চার বছরের ছোট বোন আদিলা হোসেন। সাথে ছিলেন তাদের নানা মুসা আহমেদও।

বাড়ির পথে আধঘন্টা যেতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড ফৌজদারহাট এলাকায় চট্টগ্রামগামী পণ্যবাহি একটি লরি উল্টে পড়ে প্রাইভেটকারের উপর। এতে গাড়ির চালকসহ ৫ জনই চাপা পড়ে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আদিবা কীভাবে যে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।

এ সময় ভয়ে কাঁপছিল সে। আর চিৎকার করে কান্না করছিল। আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে কোলে নিয়ে সান্তনা দিলেও গাড়ির ভেতর থেকে বাকি চারজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগের প্রায় দুই ঘন্টা পর ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। যারা ক্রেন দিয়ে লরি টেনে তাদের জীবিত উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সেখানে গাড়ি চালক সোহেলকে ক্যাজুয়াল্টি বিভাগে এবং দুই মেয়ে ও বাবা আবু বক্করকে ২৮ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রোববার সকালেও তারা সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময় হাতে আঘাত পাওয়া আদিবা বার বার বাবার কাছে ছুটে এসে নিজের ক্ষত দেখাচ্ছেন। বাবা আবু বক্কর সে ক্ষতের ওপর হাত বুলিয়ে দিয়ে মেয়েকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর ছোট মেয়ে আদিলা ছিলেন বক্করের বড় ভাই হাসানের কোলে।

এ সময় আবু বক্কর বলেন, মা-বাবার দোয়া ছিল মেয়ে, ভাইসহ নতুন জীবন পেয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে বড় মেয়ে আদিবা খুব ভয় পেয়েছে। ছোট মেয়ে আদিলার চোখেমুখেও আতঙ্ক। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বক্কর বলেন, কী হয়েছে বুঝতে পারিনি। দুর্ঘটনার পরপর দেখি গাড়ির বাঁ দিকের দরজাটি খুলে যায়। আমার মেয়ে আদিবা বের হয়ে যেতে সক্ষম হয়। আমার বাঁ পা আটকে যায় সামনের আসনের নিচে। কোলে মানে ঊরুর ফাঁকে ছোট মেয়ে আদিলা। কোনোরকমে কাত হয়ে ছিলাম।

উদ্ধার অভিযানের বর্ণনা দিয়ে বক্কর বলেন, ছোট মেয়েটি কোলে ছিল। কান্না করছিল। তাকে অভয় দিয়েছি। কিন্তু নিজেও ভয়ে ছিলাম। যদি গাড়ির ছাদ এক-দুই ইঞ্চি দেবে যায়, তাহলে শেষ। একসময় কোলের কাছে আটকে থাকা মেয়ে আদিলাকে আগে উদ্ধার করা হয়। এরপর বাঁ পা আটকে যাওয়া বক্করকে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার থেকে বের করে আনা হয়। বের করা হয় শ্বশুর মুসা ও গাড়িচালককে।

বক্করের ভাই হাসান বলেন, এই দুর্ঘটনায় মেয়ে দুটি খুব ভয় পেয়েছে। বাবাকে আনতে যাওয়ার আগের দিন রাত থেকে খুব উৎফুল্ল ছিল বড় মেয়ে আদিবা। বাবাকে স্বাগত জানাতে আদিবার সঙ্গী হয়েছিল তার ছোট বোন দুই বছরের আদিলা হোসেনও। তাদের সঙ্গে ছিলেন নানা মুসা আহাম্মেদ।

আবু বক্কর তাঁর দুই মেয়ে এবং শ্বশুরকে নিয়ে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারে করে বিমানবন্দর থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁদের বাড়ি ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নে। আদিবা বাঁ পাশে বাবার গা ঘেঁষে বসে ছিল। আর আদিলা ছিল বাবার কোলে। বাড়ির পথে আধঘণ্টা যেতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।

ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সামনে একটি কনটেইনারবাহী লরি বক্করদের পরিবহনকারী প্রাইভেট কারটিকে চাপা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শুরুতে তাঁরা ভেবেছিলেন চালকসহ গাড়ির পাঁচ আরোহীর সবাই মারা গেছেন। হঠাৎই গাড়ি থেকে আদিবা বের হয়ে আসে। স্থানীয় লোকজন বের হয়ে আসা আদিবাকে নিজেদের কাছে রেখে অভয় দেন। তাঁরা কান্নারত মেয়েটিকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা তখন লরির নিচে প্রাইভেট কারে আটকা পড়া চারজনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। কেউ কেউ নিজেদের মতো করে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হন। দুই ঘণ্টা পর হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের প্রচেষ্টায় চারজনই জীবিত উদ্ধার হন।

উদ্ধারের পর বক্কর ও মুসাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বক্কর বুকে ও ঘাড়ে আঘাত পেয়েছেন। আর মুসা আঘাত পেয়েছেন পায়ে ও বুকে। তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page