
# চড়া দামে বিক্রয় হচ্ছে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ
# হতাশায় ভোক্তারা
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির পর গত পাঁচ দিন ধরে চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ঢুকছে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক। অথচ পেঁয়াজের দামে ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি এ পর্যন্ত। উল্টো ভারতীয় ও দেশি উভয় ধরনের পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
ফলে পেঁয়াজ আমদানির পর দাম কমার যে প্রত্যাশা ছিল সাধারণ ভোক্তাদের তা এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু।
তিনি বলেন, ভোক্তারা মনে করেছিল দেশি পেঁয়াজের সংকটের মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে দাম কমবে। উল্টো ভারত থেকে ৪০-৫০ টাকায় কেনা পেঁয়াজ হাতবদল হয়ে খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। যা স্পষ্ট কারসাাজি।
তিনি বলেন, ভরা মৌসুমেও সবজির চড়া দামের মধ্যে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দর ভোক্তা সাধারণকে দিশেহারা করে তুলেছে। চট্টগ্রামের সবকটি বাজারে পেঁয়াজের দামে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।
তিনি অভিযোগ তুলেন, সরকারিভাবে যথাযথ তদারকি না থাকায় আমদানির সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছাচ্ছে না। কারসাজিটা কোথায় তা বের করে গুড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সেটা করছে না।
ভোক্তারা জানান, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ চট্টগ্রামের খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। আর দেশি পুরনো পেঁয়াজের দাম ঠেকেছে ১৫০ টাকায়। বাজারে নতুন ওঠা দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে।
অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ভারত থেকে কেনা এই পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০ টাকার কাছাকাছি। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ শুল্ক ও পরিবহন খরচ যুক্ত হওয়ার পরও খুচরা পর্যায়ে এত ব্যবধান থাকার যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখনো অপ্রতুল। সরবরাহ বাড়লে পেঁয়াজের দাম কমবে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ওমর ফারুক জানান, দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে আসায় দাম বেড়েছিল। এখন আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরও দাম কমছে না। বাজারে যে পরিমাণ পেঁয়াজের চাহিদা, সেই অনুপাতে সরবরাহ আসছে না। এ কারণেই মূলত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ টাকায় উঠে যাওয়ার পর এখন দাম পড়ার হার খুবই ধীর বলে মন্তব্য করেন তিনি। পেঁয়াজের দাম কমতে আরও অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। ততদিনে পুরনো দেশি পেঁয়াজ যা আছে সব বিক্রি হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামের আরেক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আমদানিকারকদের দিকে। তাঁদের ভাষ্যমতে, বাজারে এখন একাধিক মানের পেঁয়াজ রয়েছে। ভারত থেকে আসা কিছুটা নিম্নমানের পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি হলেও ভালো মানের বড় পেঁয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের কাছাকাছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির উৎস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদামতো পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছে না। ফলে কাক্সিক্ষত মাত্রায় দাম কমছে না। আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের বাড়তি মুনাফার লোভকেও দায়ী করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান ও আড়তগুলোর নথিপত্র পর্যালোচনা করে বাজার তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান জানিয়েছেন, গত শনিবার পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি বা অনুমতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে। তবে এর বিপরীতে দেশে এসেছে মাত্র তিন হাজার টন।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের বড় অংশ আসে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে। সেখান থেকে বর্ডারে আসতে তিন-চার দিন এবং দেশের বাজারে পৌঁছতে আরও একদিন সময় লাগে। এ কারণেই আইপি নেওয়ার পরও সব পেঁয়াজ এখনো বাজারে এসে পৌঁছায়নি। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন প্রতিদিন ২০০টি করে আইপি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
ভোক্তারা বলছেন, ভরা মৌসুমেও সবজির চড়া দামের মধ্যে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দর তাদের দিশেহারা করে তুলেছে। ভরা মৌসুমেও একদিকে সবজির দাম চড়া। অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম চড়া। ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের সাথে আয়ের কোন মিল নেই সাধারণ মানুষের।
চট্টগ্রাম মহানগরীর নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আসিফ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভারত থেকে ৪০ টাকায় কেনা পেঁয়াজ হাতবদল হয়ে খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম কিভাবে হয় তা আমার বোধোদয় হচ্ছে না। দলীয় সরকারের সময় সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা শুনলেও এখন তো সিন্ডিকেট থাকার কথা নয়।










































