Skip to content

বৃহস্পতিবার- ৫ জুন, ২০২৫

মিরসরাই সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় চোরাই চিনি

মিরসরাই সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় চোরাই চিনি

বাংলাদেশ-ভারতের চট্টগ্রাম মিরসরাই সীমান্ত পথ দিয়ে আসছে চোরাই চিনি। যা চলে যাচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিনি ব্যবসায়ীদের কাছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের আমলীঘাট এলাকায় মেরকুম সীমান্তে চোরাই পথে চিনি দেশে প্রবেশ করার সময় বিএসএফের গুলিতে এক কিশোর নিহতের ঘটনায় বেরিয়ে আসে চিনি চোরাচালানের এই তথ্য।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আজাদ উদ্দিন। তিনি বলেন, টোরাই পথে চিনি আনার ঘটনা আগে জানতাম না। তবে জাহেদ নামে এক ছেলে মারা যাওয়ার পর এই ঘটনা শুনেছি। গত সোমবার উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের আমলীঘাট এলাকায় মেরকুম সীমান্তে এই ঘটনা ঘটে।

একই কথা বলেছেন মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল হারুন। তিনি বলেন, চিনি চোরাচালান বিষয়ে আমি কিছু জানতাম না। তবে সেখানে গত ২৪ জুন রাতে একটি ছেলে নিহত হওয়ার ঘটনা শুনেছি। সে চিনি চোরাচালানের সাথে জড়িত। পুলিশ কিছু চিনি আটকও করে।

তবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অলিনগর বিওপি ক্যা¤েপর নায়েক সুবেদার খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, চিনি চোরাচালান নিয়ে কিছু জানি না। তবে সীমান্তে কিশোর নিহতের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যই। কিন্তু নিহত কিশোরের লাশও আমরা খুঁেজ পায়নি।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই মাস ধরে করেরহাট ইউনিয়নের মেরকুম এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ভারত অংশে একটি ছড়া দিয়ে ভারতীয় চিনি স্লুইস গেটে (ছোট পুল) নিয়ে আসা হয়। স্লুইস গেটের একটি গেট খোলা রাখা হয়। এর ভেতর দিয়ে তারকাঁটা পার করে দেন ভারতীয় শ্রমিকরা।

এরপর সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা চোরাই চিনি নৌকায় আমলীঘাট এলাকায় নিয়ে আসে। চোরাকারবারের কর্মযজ্ঞ শুরু হয় সন্ধ্যা নামার পর। সুযোগ বুঝে কখনো ভোররাত পর্যন্ত চলে এই চোরাই চিনি প্রবেশ। দৈনিক প্রায় এক হাজার বস্তা ভারতীয় চিনি প্রবেশ করে এই রুটে।

চিনি চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত কারও নাম প্রকাশে অপারগতা জানান তারা। তবে মফিজ, জামাল মাঝি, রাইফুল ও জসিম নামের ব্যক্তিরা এলাকার কিশোরদের এসব কাজে জড়িত করেন বলে জানা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই এলাকার প্রায় সবাই চোরাই চিনি বহনের কাজ করে। সীমান্ত এলাকা থেকে প্রতি বস্তা চিনি বহন করে বাংলাদেশে আনলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পান শ্রমিকরা। এতে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পান এসব শ্রমিক। তবে এসব শ্রমিকের বেশির ভাগ তরুণ এবং উঠতি বয়সী।

নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন কিশোরকে কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা এসব কাজ করে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, টাকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিই। এখানে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা কামানো যায়। আর ওপর থেকে বিজিবিকে বলা থাকে, তারা কিছু বলে না।

জড়িত কিশোররা জানান, ভারত থেকে আসা চোরাই চিনি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন চিনি কোম্পানীর কারখানায় চলে যায়। সেখান থেকে এসব কোম্পানীর মোড়কে সারাদেশে বিক্রয় হয় ভারতীয় চোরাই চিনি।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় চিনি মজুদ রয়েছে। যা চোরাইপথে দেশে আসছে। এসব চিনি প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ছাড়া কেউ চেনার কোন সুযোগ নেই। কারণ এসব চিনি দেশের বিভিন্ন চিনি কোম্পানীর কারখানা থেকে প্যাকেটজাত হয়ে আসছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইদ্রিস আলী বলেন, দেশে চিনির কাচামাল সংকট রয়েছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানিও তেমন হচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা যেমন টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে, তেমনি ভোক্তাদের চাহিদাও মেটাতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে ভারতীয় চিনি নিয়ে আসছে। এতে সরকার রাজস্ব হারালেও করার কিছুই নেই।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page