বুধবার- ১২ মার্চ, ২০২৫

রমজানে আসছে সূর্যগ্রহণ-চন্দ্রগ্রহণ, ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাব নিয়ে চিন্তা

রমজানে আসছে সূর্যগ্রহণ-চন্দ্রগ্রহণ, ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাব নিয়ে চিন্তা
print news

০২৫ সালের ১৪ মার্চ চন্দ্রগ্রহণ ও ২৯ মার্চ সূর্যগ্রহণ হবে। দুইটি তারিখই পবিত্র রমজানের ভেতরে পড়েছে। মার্চের ১৪ তারিখ চন্দ্রগ্রহণের দিন আমাদের দেশে ১২ রমজান, আর ২৯ মার্চ সূর্যগ্রহণের দিনটি রমজানের ২৭তম দিন। এই রমজানে দুইটি গ্রহণ (তথা চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ) হওয়ার সংবাদে অনেক আলেম চিন্তা করছে যে, তাহলে কি ইমাম মাহদির আগমনের সময় ঘনিয়ে এসেছে?

এই প্রশ্নের আগে আসুন এ সংক্রান্ত দুয়েকটি বর্ণনা দেখে নিই। আল্লামা মুত্তাকি (র.) একটি হাদিস উদ্ধৃত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে বছর রমজান মাসের প্রথম দিকে সূর্যগ্রহণ এবং রমজান মাসের শেষের দিকে চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহদির আবির্ভাব হবে।’ (আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদি’ পৃ- ৩৮)

আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে বছর রমজান মাসে দুটি গ্রহণের ঘটনা অনুষ্ঠিত হবে, সেই বছরই ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে।’ (আল কাওলুল মুখতাছার, পৃ-৫৩)

আলী বিন ওমর আল দারাকুতনির ‘সুনানে দারাকুতনি’ গ্রন্থে একটি হাদিস সঙ্কলিত হয়েছে, মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আল হানাফিয়্যাহ (র.) বলেছেন, সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের দুটি নিদর্শন রয়েছে, যা আকাশমন্ডল ও ভূমন্ডলসৃষ্টির পর থেকে কখনো দৃষ্টিগোচর হয়নি, নিদর্শন দুটি হলো- যে বছর চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ রমজান মাসেই ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাব হবে।’

মুজাদ্দেদি আলফেসানী (রহ)-এর ‘মাকতুবাতে রাব্বানি’ (রাব্বানির প্রত্রাবলী)-র ৩৮০ নম্বর পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যে বছর রমজান মাসের প্রথমদিকে সূর্যগ্রহণ ঘটবে এবং রমজান মাসের ১৪ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে।’ (‘মাকতুবাতে রাব্বানি’ ৩৮০ নম্বর পত্র)

ইমাম কুরতুবী (র.) রচিত কিতাব ‘মুখতাছার তাজকিয়াহ’ গ্রন্থের ৪৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমনের পূর্বে দুটি গ্রহণ রমজান মাসেই ঘটবে। নুয়ায়েম ইবনে হাম্মাদ (র.) রচিত ‘কিতাবুল ফিতান’ গ্রন্থে সতর্কতামূলক বাণী উল্লেখ করা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন রমজান মাসে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে, তখন এক বছরের খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে রাখবে।’

এসব বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে- যে বছর ইমাম মাহদির আবির্ভাব হবে সেই বছর রমজানে দুইটা গ্রহণ হবে। হাদিসে একথাও রয়েছে যে, মহাবিশ্বের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন ঘটনা শুধুমাত্র একবারই ঘটবে। অথচ জ্যোতির্বিদ্যা বিশারদদের মতে, এরকম ঘটনা একাধিকবার ঘটবে। তাহলে প্রত্যেকবারই কি ইমাম মাহদি আগমন করবেন?

আলেমরা বলেন, এসবের উপর বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। এসব ভুয়া। এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোতে জাল ও বানোয়াট একাধিক বর্ণনাকারী রয়েছেন। কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসে এসবের ভিত্তি নেই। আর এই বছর রমজানের ১২তম দিনে চন্দ্রগ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে, আর সূর্যগ্রহণের কথা রয়েছে ২৯ মার্চ। হাদিস সহিহ হোক বা জাল, বর্ণনার সাথে এই বছরের গ্রহণের কোনো মিল নেই।

সবচেয়ে বড় কথা হলো- চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ আল্লাহর দুটি নিদর্শন। এর সঙ্গে ইমাম মাহদির সম্পর্ক নেই। রাসুল (স.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমুহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো জীবন ও মৃত্যুর কারণে এ দুটির গ্রহণ হয় না। এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের সতর্ক করেন।’ (বুখারি: ১০৪৮; মুসলিম: ৯১১)

আসলে সব তথ্য তালাশ করে যা পাওয়া গেছে, তার সারমর্ম হলো- কোনো এক বছর রমজান মাসের ১ তারিখ ‘চন্দ্রগ্রহণ’ হবে এবং সেই রমজানেরই ১৫ তারিখ সূর্যগ্রহণ হবে। এটি সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত একবারই ঘটবে। আর সেই বছরই ইমাম মাহদি (আ.) আগমন করবেন। অর্থাৎ এখানে স্পষ্টভাবে সময় নির্ধারিত যে, ১ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ এবং সেই রমজানেরই ১৫ তারিখে সূর্যগ্রহণ হবে। যদি তারিখ আগপিছ হয়, কিংবা চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ আগপিছ হয়, তবুও আলামত প্রকাশিত হয়েছে বলার সুযোগ নেই।

এরপরও এই বিষয়ে কোনোরকম অসাবধানি কথা বলা যাবে না। এ বিষয়ে বিশ্বাস রাখারও দরকার নেই। যেমনটি ইবনে হাজার হায়তামি (রহ)-এর বক্তব্যে পরিস্কার- لمهدينا آيتان لم تكونا منذ خلق الله السموات والأرض، ينكسف القمر لاول ليلة من رمضان وتنكسف الشمس فى النصف منه সুতরাং আমভাবে রমজানে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ একসাথে হলেই ইমাম মাহদি আসার আলামত বলাটা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। (القول المختصر لابن حجر الهيتمى المكى-57، الاشاعة-199، الحاوى-2/78)

আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। নবীজির নামে হাদিস বলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঈশান/খম/বেবি

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page