রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

রেলওয়ে পুর্বাঞ্চল: ঘুষের টাকায় অর্থ-উপদেষ্টা অজিত কান্তি রুদ্রের দুই ফ্ল্যাট!

চট্টগ্রাম ব্যুরো :
ঠিকাদারের সবধরণের কাজে দিতে হয় কমিশন। কোথাও শতকরা হিসেবে আবার কোথাও রাউন্ড ফিগার। মোট কথা ঘুষ ছাড়া হয় না কোন কাজ। আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকায় দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের যানবাহন শাখার দায়িত্বে থাকা অর্থ উপদেষ্টা অজিত কান্তি রুদ্র।

রেলে চাকরি জীবনের ১৫ বছরের মাথায় এভাবে ২টি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন তিনি। এটাই যেন এখন এক বিস্ময়ের ব্যাপাার রেলের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে। তাদের মতে, তার বেতন স্কেল অনুযায়ী দুর্নীতি ছাড়া এই সময়ে একটি ফ্ল্যাট কেনাও সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই অফিস সংলগ্ন ইউনাইটেড সোসাইটি এপার্টমেন্ট হাউজ নামের ১৬ তলা ভবনে ২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন অজিত কান্তি রুদ্র। যার আনুমানিক বাজার মুল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এছাড়া তার রয়েছে আরও অজানা অঢেল সম্পত্তি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মচারি জানান, ঘুষের টাকা ছাড়া তিনি কোন ফাইল ছাড়েন না। কাজ যাই হোক, তাকে টাকা দিতেই হবে। টাকার জন্য ফাইল দীর্ঘদিন আটকিয়ে রাখার কথাও জানান এক ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঘুষের টাকায় এত অল্প সময়ে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন অর্থ-উপদেষ্টা অজিত কান্তি রুদ্র।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের অর্থ-উপদেষ্টা ও অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (পরিবহন) অজিত কান্তি রুদ্র একটি ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা ৮০ জন মিলে একটা জমি কিনে ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছি, সেখানে ৮৪টি ফ্ল্যাট হয়েছে। যেটার নাম ইউনাইটেড সোসাইটি এপার্টমেন্ট হাউজ।

তিনি বলেন, ওই এপার্টমেন্টে দুটি নয়, আমি একটি ফ্ল্যাট কিনেছি। আমার বেতনের টাকা থেকে জমিয়ে ২৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। আরো কিছু টাকা বকেয়া আছে, যা কিস্তি হিসেবে পরিশোধ করছি। তবে এসব ফ্ল্যাট ইতোমধ্যে রেডি হয়েছে বলে জানান তিনি।

নিজেকে সৎ দাবি করে অজিত কান্তি রুদ্র বলেন, আমি কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই। বৈধ বেতনের টাকাতেই ফ্ল্যাট কিনেছি। বেতনের টাকায় ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলে যোগদান করার পুর্বে আমি কাস্টমসে ছিলাম কয়েক বছর। সবমিলিয়ে নিজের টাকায়ই ফ্ল্যাট কিনেছি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, ২০০৭ সালের দিকে অজিত কান্তি রুদ্র রেলের ফাইনেন্স শাখায় ৯ম গ্রেড নিয়ে যোগদান করে। সেইসময় থেকেই ফাইল আটকিয়ে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতেন। বর্তমানে অর্থ উপদেষ্টা ও অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (পরিবহন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রেলের পরিবহন সংক্রান্ত যাবতীয় সরঞ্জাম কেনাকাটার বিল পাশ করার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

রেলের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, ১৫ বছরের চাকরি জীবনে এমন একজন কর্মকর্তা দুটি নয়, একটি ফ্ল্যাট কেনারও সামর্থ্যবান হওয়ার কথা নয়। ঘুষখোর অফিসার হিসেবে তিনিই ফ্ল্যাট কিনতে পারেন এটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার অভিমত প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

ডিআই/খম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page