
রেলের দূর্নীতি নিয়ে দূদক সোচ্চার হয়ে রেলমন্ত্রণালয়ের নিকট রেলের ১০ খাতে দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছে মর্মে রেলমন্ত্রণালয় বরাবর একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে রেলের দুর্নীতি বন্ধে ১৫টি সুপারিশও করেছে দুদক।
২ জুলাই ২০১৯ সকাল ১১টার রেলভবনে তৎকালীন রেলমন্ত্রীর কাছে দুদকের কমিশনার মোজাম্মেল হক খান এই প্রতিবেদন জমা দেন। তখন রেলমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে করে জানান, দুর্নীতি বন্ধে তার মন্ত্রণালয় জিরোটলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। রেলের দুর্নীতি দমনে দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
তবে কে শুনে কার কথা। রেলের দূর্নীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ৮৬৩ খালাসি পদে নিয়োগ বাণিজ্যে দুদকের মামলায় মোট ১২ জনকে আসামি করে, যা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। আভিযুক্ত ৪নং আসামি হওয়ার পরও প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের ঘুষ ও কমিশন বানিজ্য বেপরোয়া হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির নিকটাত্নীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটান। ফলে কোনভাবেই দমন করা যাচ্ছে না পূর্বাঞ্চল রেলের রফিক সিন্ডিকেটকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিটি কাজে ঠিকাদারের নিকট থেকে ১০-১২% কমিশন দিতেই হবে প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে। কমিশন দেওয়া যেন বৈধ আইন রফিকের জন্য। কমিশন না দিলে শুরু হয় ফাইল নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা ও বিল আটকে হয়রানির শেষ দেখিয়ে ছাড়েন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার বলেন, আমি ছোট কাজ করি, ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার সময়ও টাকা দিতে হয়, আবার বিল নেয়ার সময় কমিশনও দিতে হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতির নিকট আত্নীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব অনিয়ম ও দূর্নীতি করেন। যার ফলে ঠিকাদাররা ভয়ে চুপ থাকেন।
এসব অনিয়ম ও কমিশন বানিজ্যের কথা জানতে চাইলে প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, তাতে কি হয়েছে! কিছু হয় নাই। এসব আপনি জেনে লাভ কি? আপনি তো নিয়োগ বানিজ্য ও কমিশন বানিজ্যের জন্য দুদকের মামলার ৪নং আসামি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদক দেখার সময় নাই। আপনি যা পারেন করেন বলেই মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম অফিস সূত্র জানা যায়, এ ব্যাপারে দীর্ঘ অনুসন্ধান চলতেছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার সত্যতা পায় দুদক। ওই ঘটনায় যারাই জড়িত খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুদকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ খালাসি পদে নিয়োগে দুদক সমন্বিত জেলা-২ এর ই/আর ন: ১৪১/২০১৯ এর অনুসন্ধানকালে কার্যবিবরণী পর্যলোচনা করে দেখা যায়, প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামসহ তাদের সিন্ডিকেটের ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন।
কিন্তু দুদক অনুসন্ধানকালে সংগৃহিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মো. জিন্নাহর মূল্যায়ন নম্বর যোগ না করে, অপর সদস্য খলিলুর রহমানের স্বাক্ষর না নিয়ে সুবিধামতো মার্কশিটে নম্বর বসানো হয়। এক পরিবারের দুই ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য ৫ দিন হলেও উভয়ে চাকরি পান এবং ১৯ জনকে জালসনদে চাকরি দেওয়া হয়।
প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি ও নিয়োগ বানিজ্যের কথা জানার জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনকে একাধিকার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।













































