সোমবার- ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

রেলে ‘অচল’ দুই ওয়াশপিট, ১৯ কোটি টাকা লুট!

রেলে ‘অচল’ দুই ওয়াশপিট, ১৯ কোটি টাকা হরিলুট

# রক্ষণাবেক্ষণে নেই দক্ষ জনবল
# চলছে ম্যানুয়ালি পরিচ্ছন্নতা, হচ্ছে লোপাট
# ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা

রিচ্ছন্ন যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের নামে ১৯ কোটি টাকা খরচ করে আনা হয়েছিল আধুনিক অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্লান্ট (ওয়াশপিট)। কিন্তু দক্ষ জনবল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অচল হয়ে পড়ে আছে এই প্লান্ট। ফলে প্রতিদিন নোংরা ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

যাত্রীদের অভিযোগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও তার কোনো সুফল তারা পাচ্ছেন না। ওয়াশিং প্লান্টটি অচল পড়ে থাকায় প্রতিদিনই নোংরা কোচে ভ্রমণ করতে হচ্ছে তাদের। এতে ধুলাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর রাজধানীর কমলাপুর ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে দুটি ওয়াশপিট উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল মোট ৩৮ কোটি টাকা। স্থাপনের সময় দাবি করা হয়েছিল, আধুনিক এই প্লান্টের মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে ১৪ কোচবিশিষ্ট একটি ট্রেন ধোয়া ও জীবাণুমুক্ত করা যাবে।

আরও পড়ুন :  খাতুনগঞ্জে উপচে পড়ছে ভোগ্যপণ্য

এছাড়া প্রতিটি প্লান্টে প্রতিদিন এক লাখ লিটার পানি সাশ্রয় এবং ব্যবহৃত পানির ৭০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার সুবিধাও ছিল। কিন্তু বাস্তবে রাজশাহীতে পর্যাপ্ত সুবিধা ও প্রশিক্ষিত জনবল ছাড়াই প্লান্ট চালু করা হয়। প্রায় ২০ মাস নামকাওয়াস্তে চলার পর ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল থেকে প্লান্টটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে ট্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে আউটসোর্সিং শ্রমিক দিয়ে ম্যানুয়ালি। এতে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে রেলওয়ের। যা অকল্পনীয়। একদিকে ওয়াশপিট ক্রয়ের নামে ১৯ কোটি লুট, অন্যদিকে ম্যানুয়ালি ওয়াশের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লুটপাঠ। এ যেন সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল অবস্থা।

আরও পড়ুন :  কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার ওপর হামলা, নেপথ্যে কারা?

সংশ্লিষ্টদের মতে, ট্রেন ওয়াশ কাজে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিবছর যে দেড় কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে তাতে বড় ধরণের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এই টাকা ৫ বছর ওয়াশ করলেও খরচ হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি দুদক বা নিরপেক্ষ কোন সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে করছেন অনেকেই।

অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন রেল মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রামের রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত আগ্রহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ওয়াশপিট দুটি। কিন্তু বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় এখন সেগুলো ধুলাবালিতে ঢেকে পড়ে আছে। কোন কাজেই আসছে না এই ওয়াশপিট।

আরও পড়ুন :  লটারিতে সিএমপির ১৫ থানার ওসির চেয়ার বদল

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত চাহিদা ও ব্যবহারের উপযোগিতা বিবেচনা না করে শুধু অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

এ বিষয়ে জানতে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুবক্তগীনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হুয়াটস অ্যাপে ফোন দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। জিএমের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়া সফরে রয়েছেন।

ঈশান/খম/বেবি

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page