বুধবার- ১২ মার্চ, ২০২৫

লুটপাটের উৎসবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান রেজাউলের অবসর

লুটপাটের উৎসবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান রেজাউলের অবসর
print news

# অডিট ম্যানেজের নামে লোপাট ২৫ লাখ টাকা
# স্কুলের এডহক কমিটির অনুমোদনে লোপাট দেড় কোটি টাকা
# নাম ও বয়স সংশোধনীর নামে লোপাট ৩ কোটি টাকা

অডিট ম্যানেজের নামে হাতিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন স্কুলের এডহক কমিটির অনুমোদনে হাতিয়েছেন দেড় কোটি টাকা। নাম ও বয়স সংশোধনীর সম্মানীর নামে হাতিয়েছেন ৩ কোটি টাকা। এছাড়া নানা আপত্তিকর ফাইল অনুমোদনে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

এভাবে অন্তত ১০ কোটি টাকারও বেশি লুটপাট চালিয়ে উৎসবের আমেজে অবসরে গেলেন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের (চশিবো) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম। চাকরির বিধি মোতাবেক গত ৩১ জানুয়ারি অবসরকালীন ছুটিতে যান তিনি।

তবে এর আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকতে মন্ত্রণালয়ে নানা উপায়ে ধর্ণা দিয়েছেন। প্রভাব খাটিয়েছেন সেনাবাহিনীতে মেজর হিসেবে দায়িত্বে থাকা নিজের ভাই ও বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় শীর্ষ নেতার।

যদিও তিনি ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের খাস লোক। নিজেকে পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগের পালনকর্তা হিসেবে। যার কারণে বোর্ডের সাধারণ কর্মচারি থেকে অনেক বড় বড় কর্মকর্তাও তার কাছে ছিল নস্যি।

বোর্ডে তার প্রিয়ভাজন ছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত উপসচিব মো. বেলাল হোসেন। যার ছত্রছায়ায় বোর্ডে গড়ে উঠে বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের অন্যতম হচ্ছেন-হিসাব শাখার আইয়ুব আলী ও ওসমান গণি, সংস্থাপণ শাখার বিমল কান্তি চাকমা ও আফম সেলিম, পরীক্ষা শাখার জামশেদুল আলম ও মো. রাজু, কলেজ শাখার জাহাঙ্গীর আলম ও কুতুব উদ্দিন। যারা ছিলেন বোর্ডে সব ধরণের অনিয়ম-দূর্নীতির কারিগর। আর এদের ক্যাপ্টেন ছিলেন উপসচিব মো. বেলাল হোসেন ও চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।

ঠিক এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে নানা বৈষম্য ও হয়রানির শিকার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি। সাম্প্রতিক সময়ে অডিট ম্যানেজের নামে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া অন্তত ২৫ লাখ টাকার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সম্প্রতি কথা হয় একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারির সাথে।

তারা জানান, চলতি বছরের অডিট এখনো আসেনি শিক্ষাবোর্ডে। কিন্তু চেয়ারম্যান অবসরে যাবেন তাই অডিটকে ম্যানেজের জন্য বোর্ডের প্রায় ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারির প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান রেজাউলের খাঁস লোক খ্যাত হিসাব শাখার আইয়ুব আলী ও ওসমান গণি আদায় করেন প্রায় ৬ লাখ টাকা, সংস্থাপণ শাখার বিমল কান্তি চাকমা আদায় করেন ১০ লাখ টাকা, কলেজ শাখার জাহাঙ্গীর আলম আদায় করেন ৪ লাখ টাকা। এভাবে অপর দুটি শাখা থেকেও আরও ১০ লাখ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তুঅবসরে যাওয়ার প্রাক্কালে এসব টাকা ভাগবাটোয়ারা করে হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সিন্ডিকেট।

এছাড়া অবসরের আগে নানা আপত্তির কারণে বোর্ডে আটকানো বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির বহু ফাইল লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে অনুমোদন দিয়েছেন রেজাউল করিম। তম্মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে অনুমোদন দেন ফ্যাসিবাদ সমর্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটিও। এভাবে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা উপজেলার অনেকগুলো বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির অনুমোদনের নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়েছেন।

এছাড়া সরকারি আর্থিক বিধি ভঙ্গ করে নাম ও বয়স সংশোধনীর কাজে বকেয়া সম্মানিবাবদ ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৮ বছরের জন্য তিনটি চেকে বোর্ডের তহবিল থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা লোপাট করেছেন। এরমধ্যে প্রায় ৭ লাখ টাকা নিজের পকেটে পুরেছেন বোর্ডের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। অথচ বকেয়ার নামে ভাগবাটোয়ারা করা এই টাকা উত্তোলনের কোনো এখতিয়ারই নেই বোর্ড কর্তৃপক্ষের। আবার যাদের নামে বকেয়া আদায় করা হয়েছে তাদের অধিকাংশেই তৎকালীন সময়ে বোর্ডে কর্মরতই ছিলেন না।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগের বকেয়া সম্মানি বিতরণ নিয়েও আপত্তি ছিল। সেসময় প্রাপ্যতার অতিরিক্ত সম্মানি বিতরণ হয়েছে উল্লেখ করে সরকারের অডিট আপত্তি ছিল। ওই আপত্তিতে বলা হয়, পরীক্ষার সনদপত্র ও নম্বরপত্রের লিখন, যাচাই, স্বাক্ষর ও প্রেরণে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত সম্মানি প্রদান করা, ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ ও প্রকাশ কাজ ক¤িপউটারে ও অনলাইনে স¤পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ওই কাজের সম্মানি প্রদান করে বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব অডিট আপত্তির তোয়াক্কা না করেই উল্টো দায়িত্বে না থেকেই বকেয়া সম্মানি বিতরণ করেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম। তাছাড়াও এই বকেয়া বণ্টনের বিষয়ে বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম, অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তীর ও অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার থাকাকালীন কর্মচারিরা জোরাজুরি করলেও সে সময়ে তারা বকেয়া বন্টনের ঘোর বিরোধিতা করেন।

এদিকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড দ্য ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তবে বোর্ডের আর্থিক বিষয় এই অধ্যাদেশ অনুসারে পরিচালিত হয় না। কারণ আর্থিক বিধির বিষয়ে ওই অধ্যাদেশে বলা আছে বোর্ড নিজস্ব আর্থিক বিধি প্রণয়ন করবে। যতদিন না আর্থিক বিধি প্রণয়ন হবে ততদিন জিএফআর (জেনারেল ফিন্যান্সিয়াল রুলস) মেনে চলবে। অর্থাৎ শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব কোনো আর্থিক বিধি না থাকায় শিক্ষা বোর্ড অধ্যাদেশ- ১৯৬১ অনুযায়ী বোর্ডের আর্থিক কর্মকান্ড সরকারি আর্থিক বিধি অর্থাৎ জিএফআর অনুযায়ী চালানোর সু¯পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী জিএফআর (জেনারেল ফিন্যান্সিয়াল রুলস) মানার বাধ্যবাধকতা আছে শিক্ষাবোর্ডের।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) মো. তাওয়ারিক আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন নামে সম্মানি নেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। কিন্তু অর্ডিন্যান্স অনুসারে আর্থিক বিষয়ে জিএফআর মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বোর্ড পরিচালনার জন্য বোর্ড কমিটি আছে। কিন্তু আর্থিক বিধির উপর বোর্ড কমিটির কোনো অধিকার নেই। কিন্তু তারা সেই আর্থিক বিধি কখনো মানে আবার কখনো মানে না। এখন তারা যদি বলে বোর্ড কমিটির অনুমোদন নিয়ে করেছি তাহলেও কিন্তু পার পাওয়া যাবে না। যে বন্টনটা তারা করেছে সেটি সরকারি তহবিল তছরুপ করার সামিল। এটা আমাদের আমলে অনেকবার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু তৎকালীন যারা দায়িত্বে ছিলেন আমরা সবাই মিলে সেটি করতে রাজি হইনি। কারণ এটা বিধিবহির্ভূত।

তিনি আরও বলেন, আর্থিক বিষয়ে বোর্ড কমিটি অথরিটি না। বোর্ড কমিটি অনুমোদন এখানে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বোর্ডের যদি নিজস্ব আর্থিক বিধি থাকতো তবে তখন বোর্ড কমিটি সুপ্রিম অথরিটি হতো। কিন্তু যেহেতু বোর্ডের নিজস্ব আর্থিক বিধি নাই সেক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী জিআরএফ ফলো করতে হবে। বোর্ড কমিটি সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। এটা পুকুরচুরি না এটা রীতিমতো সাগরচুরি। আমরা শিক্ষক হয়ে যদি এসব কাজ করি, এটা লজ্জাজনক।

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের বর্তমান একজন কর্মকর্তা বলেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেক অডিট আপত্তি আছে। আমরা সেসময় থেকে বোর্ডে কর্মরত আছি তাও এই টাকা আমরা প্রাপ্য না। কারণ ২০১৪ সাল থেকে সম্মানি নিয়েছে, ওইসময়ে তো তারা কর্মরতও ছিল না। তাহলে এই সম্মানি তারা কীভাবে নেয়? এটা তো পুকুরচুরি। বোর্ড চলে পাবলিকের টাকায় আর পাবলিক মানি মানে গর্ভমেন্ট মানি।

এদিকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১২ মে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দায়িত্ব নেন আরও দুই দিন পর ১৫ মে। এর আগ পর্যন্ত পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমে যুক্ত না থেকেও তিনি সম্মানী বাবদ ৮৪ হাজার ৯৪৭ টাকা তুলে নেন। দায়িত্ব পালন না করে তাঁর এই টাকা নেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

নিয়ম অনুযায়ী বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিবছর ৮টি করে ১৬টি সম্মানী পান। এরমধ্যে পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করলে মূল বেতনের অর্ধেক, পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণের পর অর্ধেক, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মূল বেতনের সমপরিমাণ ও ফলাফল প্রকাশের পর মূল বেতনের অর্ধেক সম্মানী দেওয়া হয়। এর বাইরে ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই, পুননিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ, নম্বরপত্র ও সনদ বিতরণ করলে বিভিন্ন অনুপাতে আরও চারটি সম্মানী পান কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

বোর্ডের নথিতে দেখা গেছে, ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই ও পরীক্ষা শেষ করায় দুটি সম্মানী বণ্টনের জন্য তৎকালীন চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র নাথ বরাবর আবেদন করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। ১৪ মে এ আবেদন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওই দিনই আবেদনপত্র অনুমোদন করে সম্মানী বণ্টনের জন্য হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার উপপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান।

পাশাপাশি ১৪ মে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তিনি ১৫ মে যোগ দিয়ে পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজের সম্মানী বাবদ মূল বেতনের অর্ধেক ৩২ হাজার ৩০ টাকা গ্রহণ করেন। ১৬ মে এ টাকা বণ্টন করা হয়।

বোর্ডের প্রণোদনা বণ্টনবিষয়ক একটি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার মোট ব্যবহারিক উত্তরপত্রের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার ৭০৪। প্রতি উত্তরপত্র বাবদ ৫ টাকা হারে ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫২০ টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বণ্টন করা হয়। চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী সম্মানী পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯১৭ টাকা। ১১ জুন অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে এ টাকা পান চেয়ারম্যান।

এছাড়া চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে আট মাস দায়িত্ব পালন শেষে ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরোত্তর ছুটিতে যান রেজাউল করিম। তবে অবসরে যাওয়ার সুবিধার্থে বোর্ড থেকে ২৯ তারিখে রিলিজ নেন বোর্ডের এ কর্মকর্তা। যদিও পিআরএলে যাওয়ার দশ দিন আগেই গত ২১ জানুয়ারি প্রেষণ প্রত্যাহার করে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়।

এর আগে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব থাকাকালীন ওএমআর শিট সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদলি করা হয়। এরপর ফন্দিফিকির করে মেজর ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সুপারিশে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান পদে ফিরে আসেন তিনি। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন রেজাউল করিম। পরীক্ষার দায়িত্ব পালন না করেও তুলে নেন অর্ধ লাখ টাকা।

অবসরের প্রাক্কালে অনৈতিক ও বিধি লঙ্ঘনের কারণে শিক্ষাবোর্ডে আটকানো সব ধরণের ফাইলে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে স্বাক্ষর করে বৈধতা দিয়েছেন রেজাউল করিম। অবৈধ এই অর্থের ঘ্রাণে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে চাননি তিনি। তাই অবসরের পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাপ করছেন রেজাউল করিম। সেখানেও নিজের মেজর ভাইয়ের প্রভাব খাটাচ্ছেন-এমন খবর পাচ্ছেন বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

নওফেলের পা চাটেন যেভাবে
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, রেজাউল করিম শিক্ষা বোর্ডের সচিব হয়েছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের আশীর্বাদে। নওফেলের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি করেছেন বেপরোয়াভাবে। এ কারণে সে সময়ের বোর্ড চেয়ারম্যান মুস্তফা কামরুল আখতার তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।

এক পর্যায়ে ওএমআর শিট সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদলি করা হয়। কিন্তু ছলচাতুরী আর মেজর ভাইয়ের প্রভাবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের সুপারিশে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে ফিরে আসেন তিনি।

সে কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নিয়েই উপসচিব মো. বেলাল হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে নওফেলের প্রয়াত বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবর জেয়ারত করেন। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নওফেলের বাড়িতে হামলার পর চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ও উপ সচিব মো. বেলাল হোসেন বোর্ডের গাড়ি নিয়ে সেখানে যান।

সেখানে এক বক্তৃতায় চেয়ারম্যান রেজাউল করিম প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন-এই হামলায় জড়িত ছাত্রদের স্কুল-কলেজ থেকে খোঁজে খোঁজে বের করা হবে। তাদের পড়ালেখার ইতি টেনে দেওয়া হবে। বরবাদ করে দেওয়া হবে হামলাকারী ছাত্রদের ভবিষ্যত। ছাত্রদের মোকাবেলায় তিনি কোটি টাকা অনুদানেরও ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে কথা বলার মতো সুযোগ হয়নি। কারণ অবসরের পর চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটি চলে যায় বোর্ড সচিবের ড. একেএম সামছু উদ্দিন আজাদের হাতে। বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ে ফোন করা হলে সচিব ড. একেএম সামছু উদ্দিন আজাদ বলেন, বিষয়টি যাচাইয়ের কোন সুযোগ আমার নেই। নতুন চেয়ারম্যান আসলে তিনিই এসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে পারবেন।

শুধু তাই নয়, বিষয়টি যাচাই করতে ফোন করা হয় পরীক্ষা শাখার সেকশন অফিসার জামশেদুল আলমকে। তিনি বলেন, না সেরকম কিছু নয়, তবে এ বিষয়ে বসদের সাথে একটু কথা বলেন। তারা ভাল বলতে পারবেন। ফোন করা হয় হিসাব শাখার আইয়ুব আলীকে। প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, সব মিথ্যা। টাকা তোলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। একই কথা বলেছেন কলেজ শাখার জাহাঙ্গীর আলম ও কুতুব উদ্দিনও। ফোন রিসিভ করেননি সংস্থাপণ শাখার বিমল কান্তি চাকমা ও আফম সেলিম।

এদিকে চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর তার দোসররা নানাভাবে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। তাদের নানা অপতৎপরতায় দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বোর্ডসহ দেশে বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকবে।

ঈশান/মখ/বেবি

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page