শ্রমিকলীগ নেতাকে চট্টগ্রাম নতুন রেলস্টেশনের টয়লেট ইজারা দিতে নানা কারসাজির অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। নিয়ম মেনে দরপত্র আহবান, শিডিউল বিক্রি, জমাদান ও বাক্স খোলাসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর হঠাৎ পুরো প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয় রেলওয়ে কর্মকর্তারা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারেরা।
ঠিকাদাররা অভিযোগ তুলেছেন, কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাব খাটিয়ে বিগত সময়ে ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে চিহ্নিত শ্রমিকলীগ নেতা বাদলকে সুবিধা দিতে রেল কর্মকর্তারা এই কারসাজি করেন। তাদের দাবি—এটি রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির স্পষ্ট প্রমাণ।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশল-১ এর কার্যালয় থেকে গণশৌচাগার বা টয়লেট ইজারার আহবান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নতুন রেলস্টেশনে অবস্থিত ৬টি টয়লেট, কয়েকটি বেসিন, ৩টি ওজুখানা ও ২টি প্রস্রাবখানা ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়।
শর্ত হিসাবে বলা হয়, ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্র শিডিউল ক্রয় করা যাবে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে জমা দিতে হবে। একইদিন সাড়ে ১২টায় অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে দরপত্র বাক্স খোলা হয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ে মোট ৯টি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়ে ৭টি দরপত্র। সবার উপস্থিতিতে বাক্স খোলা হয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়।
সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে উঠে আসে মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনাল (৫ লাখ ৫ হাজার টাকা)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর ছিল সাবির মোটরসের (২ লাখ ৫০ হাজার টাকা), এরপর বুলু প্রিন্ট (২ লাখ ২০ হাজার টাকা)। দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষ করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু রাত ১০টায় হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-১, ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রহিমের কার্যালয়। চিঠিতে দরপত্র স্থগিতের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে শিডিউল ক্রয় করেছি, জমা দিয়েছি এবং বাক্স খোলার সময় উপস্থিত থেকেছি। সব কিছু অফিসিয়ালি শেষ হওয়ার পর রাতারাতি স্থগিতাদেশ জারি করা হলো—এটা পরিষ্কার দুর্নীতি ছাড়া কিছু নয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী নেতা কামাল পারভেজ বাদল অবৈধভাবে এই গণসৌচাগার দখল করে রেখেছেন। নিয়মিত লীজ ও টেন্ডারের মাধ্যমে রাজস্ব দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা করছেন না। মাত্র একবার রাজস্ব দেওয়ার পর থেকে সরকারের প্রাপ্য অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন।
মাহবুবুর রহমানের দাবি, বাদল শুধু অবৈধভাবে গণশৌচাগার পরিচালনাই করেননি, বরং এর আড়ালে গাঁজা, ইয়াবা ও জুয়ার আসর বসিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। অথচ তার আয়কর নথিতে শূন্য রিটার্ন দেখানো হয়। তথ্য অনুযায়ী, মাদারবাড়ীতে তিনি দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও আয়কর ফাঁকির অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে বলেও জানান মাহবুবুর রহমান। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, দরপত্র বাক্স খোলার পর বৈধ কারণ ছাড়া পুরো প্রক্রিয়া স্থগিত করা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ এর পরিপন্থী। এভাবে কোনো টেন্ডার স্থগিত করা হলে স্বচ্ছতা নষ্ট হয় এবং সুবিধাভোগী পক্ষকে সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিভিন্ন ইজারা ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি চলে আসছে। এবারও টয়লেট ইজারায় সেই একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। যা রেলওয়ের ভাবমূর্তি নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হলো।
You cannot copy content of this page