রবিবার- ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

সন্ত্রাসের জনপদ রাউজান

সন্ত্রাসের জনপদ রাউজান

# ১৪ মাসে ১৭ হত্যাকান্ড
# বিএনপির দুই নেতার অনুসারী হিসেবে সক্রিয় একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী
# নাকানি-চুবানি খাচ্ছে পুলিশ

চট্টগ্রামে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল এক সময়। সেই পরিচিতি আবার ফিরে এসেছে গত বছর ৫ আগষ্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। সেই থেকে একের পর এক ঘটছে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও হত্যাকান্ড।

পুলিশের খাতার হিসাব অনুযায়ী গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ১৪ মাসে ১৭টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি হত্যাকান্ড রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। বাকিগুলো ঘটেছে পারিবারিক বিরোধ, চাঁদাবাজি ও দখলকে কেন্দ্র ধরে।

আবার এগুলোর অধিকাংশই প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে চরম নাকানি-চুবানি খাচ্ছে রাউজান থানায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা।

রবিবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাউজানে জড়িত একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। কেউ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পাড়া-মহল্লায়। কেউ ইউনিয়নে। ত্রাস সৃষ্টি করছে তারা। তাদের কাছে জিম্মি উপজেলার বাসিন্দারা।

সব ক্ষেত্রে দলীয় পদ-পদবি না থাকলেও এসব বাহিনীর প্রধানরা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের নাম-পরিচয় ব্যবহার করেই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত ১৪ মাসে রাউজান থানা থেকে তিনবার ওসিকে বদলি করা হয়। তবু পরিস্থিতি অস্থিতিশীল।

তিনি বলেন, শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে রাউজান উপজেলার পৌরসভার রশিদারপাড়া সড়কে জানে আলম বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর ওরফে আলমকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এটিই ছিল সর্বশেষ হত্যাকান্ড।

তিনি রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব রাউজানের সিদ্দিক চৌধুরী বাড়ির আবদুস সত্তারের ছেলে। নিহত আলমগীর ওরফে আলমকে (৫০) যুবদল নেতা বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকার।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, নিহত আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছেন। আর সে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের এ সময়ে রাউজানের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হতে হলো আলমকে। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি।

রাজনৈতিক ১২ হত্যাকান্ড
এর আগে গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে করে আসা অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে নিহত হন মুহাম্মদ আবদুল হাকিম (৫২) নামের বিএনপির এক কর্মী। এ সময় তার সঙ্গে গাড়িতে থাকা আরেকজন গুলিবিদ্ধ হন। উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মদুনাঘাট বাজারের পানি শোধনাগার মূল ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় তিনি প্রাইভেটকারে চড়ে রাউজান থেকে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন হাকিম। তাকে কারা গুলি করে মেরেছে এ বিষয়ে এখনো জানতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।

আরও পড়ুন :  পাউবো চট্টগ্রামের এসই জুলফিকারের ঘুষের টাকা পাচার হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়!

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ৬৫টি সংঘর্ষ হয়েছে। পাশাপাশি ১৭টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এগুলোর ১২টি রাজনৈতিক। তার মধ্যে নয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনায় পরিবার থেকে মামলা করা হলেও তিনটির ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ।

নিহতদের মধ্যে বিএনপি ও যুবদলের ৭ জন রয়েছেন। তারা হলেন- আলমগীর ওরফে আলম, মুহাম্মদ আবদুল হাকিম, সেলিম, কমর উদ্দিন, ইব্রাহিম, দিদারুল ও মানিক আবদুল্লাহ। আওয়ামী লীগের চার জন রয়েছেন। তারা হলেন- আবদুল মান্নান, মুহাম্মদ ইউসুফ মিয়া, আবু তাহের ও মুহাম্মদ হাসান। এছাড়া ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম খুন হন।

বেশি হত্যাকান্ড নোয়াপাড়ায়
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড ঘটেছে নোয়াপাড়া ইউনিয়নে। এখানে রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফজল হক বাহিনী, জসিম বাহিনী, কামাল বাহিনী, জানে আলম বাহিনী।

এর পাশেই পশ্চিম গুজরায় রয়েছে রমজান বাহিনী, বাগোয়ানে আছে মামুন বাহিনী, ভূপেশ বাহিনী। এছাড়া পৌরসভাসহ সব ইউনিয়নে আছে একাধিক সশস্ত্র বাহিনী। বিএনপি নেতাদের মদদে এসব বাহিনীর বেশিরভাগই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গড়ে উঠেছে। যাদের আতঙ্কে নির্বিকার স্থানীয়রা।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, হামলা ও খুন এখন রাউজানের নিত্যদিনের ঘটনা। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি চলছে। দেখে মনে হয় নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। আতঙ্কে থাকতে হয়। ৫ আগস্টের আগে তেমন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেনি।

বিএনপির দুই নেতায় বিভক্ত সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো
চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলার মধ্যে একটি রাউজান উপজেলা। ১৪ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। ২৪৩ বর্গকিলোমিটারের আয়তনের এই উপজেলায় তিন লাখ ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত।

একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। অপর অংশের নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাদের আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেলেও এখানে ঘটেছে উল্টো। এসব সন্ত্রাসী দলীয় খোলস বদলে বিএনপির এই দুই নেতার অনুসারী হয়ে এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে-বিদেশে পালিয়ে থাকা বিএনপি নেতাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরাও।

এখানে প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। গ্রুপের নেতাদের বেশিরভাগই বিএনপির নাম ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, পাহাড় থেকে মাটি বিক্রি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ইটভাটা থেকে চাঁদাবাজি ও সড়কে চাঁদাবাজি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন সহিংসতা ঘটাচ্ছে তারা।

আরও পড়ুন :  আমদানি করা গম নিয়ে মার্কিন জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাউজানে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে বিএনপি নেতা মুহাম্মদ আজিজুল হকের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পথেরহাট বাজারের মাদানি মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির এই নেতার অভিযোগ, সন্ধ্যায় মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর মোটরসাইকেল আরোহী একদল দুর্বৃত্ত হামলা করেছে। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব।

সর্বত্র আতঙ্ক
এসব বাহিনীর বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কের কথা জানান। গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ হলে কিংবা বাহিনীর সদস্যরা জানলে মেরে ফেলবেন, এমন আতঙ্কে আছেন সবাই। ফলে সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।

শেষে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজারটি ছোটখাটো একটি শহরের মতো। এখানে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের যতগুলো শাখা আছে, অনেক জেলা শহরেও এতগুলো নেই। বাজার মধ্যরাত পর্যন্ত সরব থাকতো। এখন সন্ধ্যা নামলেই মারামারি ও গোলাগুলি ঘটছে। ফলে সন্ধ্যা নামতেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো অনেক সময় দোকানে এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে আবার কখনও অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির কথা বলে চাঁদা নিয়ে যাচ্ছে।

পথেরহাট বাজারের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতাম। এখন সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ করে দিই। সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটি নিত্যদিনের ঘটনা।

রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, রাউজানের পরিস্থিতি দেখে মনে হয় এখানে কোনও প্রশাসন নেই। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, গুলাগুলি, চাঁদাবাজি, বালু নিয়ে মারামারি, কথায় কথায় খুনের ঘটনা আতঙ্কিত করে তুলেছে। এর সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

নিস্তার চান বিএনপি নেতারাও
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ তালুকদার বলেন, কথায় কথায় রাউজানে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটছে। আমরা আওয়ামী লীগের সময়ে ১৭ বছর নির্যাতিত ছিলাম। এলাকায় আসতে পারিনি। রাউজানে না গিয়েও অসংখ্য মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছি। ৫ আগস্টের পর গ্রামে ফিরেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা হতাশ। আগের মতো অবস্থা। আমরা এর থেকে নিস্তার চাই।

যা বললেন গোলাম আকবর
রাউজানের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার। এ সময় তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর রাউজানে বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এগুলোর সঙ্গে রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা নেই।

মূলত মাটি কাটা, খালের বৈধ ও অবৈধ বালুর মহাল দখল ও বিক্রির বিরোধ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার থেকে কমিশন বাণিজ্য করার প্রতিযোগিতা, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা অনিয়মের বিরোধে এসব হত্যাকান্ড ঘটেছে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৬ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডেকেছে বিএনপি

সংবাদ সম্মেলনে চাঁদাবাজির বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, রাঙামাটি-কাপ্তাই থেকে প্রতিদিন গাছের ট্রাক আসে। প্রতিদিন প্রায় ৫০টির বেশি গাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। রাউজানে ৩৮টির মতো ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা থেকে ৩ লাখ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। রাউজানে সাধারণ মানুষ বাড়িঘর নির্মাণ করছে। বাড়িঘর নির্মাণে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। ওই টাকা তুলতে কালেক্টর (সংগ্রহকারী) আছে। তারা টাকা তুলে অ্যাকাউন্টে জমা দেয়। দিনে কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে।

যা বললেন গিয়াস কাদের
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমি রাউজানকে শান্তির জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমার কাছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কোনও স্থান নেই। আমি প্রশাসনকে বলেছি, যারা রাউজানে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতার করে যেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়।

১৭ হত্যাকান্ডে ১২ মামলা
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাউজানে ১৭ হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ১২ জন রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ৮ টি হত্যা মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করা হয়। একজন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

কমর উদ্দিন হত্যায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা হয়। দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে আরও আট জন আত্নসমর্পণ করেছেন। হাসান হত্যা মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আবদুল্লাহ মানিক হত্যায় ১৭ জনকে আসামি করে মামলা হয়। ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়।

ইব্রাহিম হত্যায় আট জনকে আসামি করে মামলা হয়। এ ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে আত্নসমর্পণ করেছেন আরও একজন। সেলিম হত্যার ঘটনায় আট জনকে আসামি করে মামলা হয়। এ ঘটনায় একজন এজাহারভুক্তসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়া দিদারুল হত্যায় কাউখালী থানায় এবং আবদুল হাকিম হত্যায় হাটহাজারী থানায় মামলা হয়েছে। বাকি তিনটি রাজনৈতিক হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এসব মামলায় গ্রেফতার নেই। তবে পারিবারিক বিরোধ, চাঁদাবাজি ও দখলকে কেন্দ্র ধরে পাঁচটি হত্যার ঘটনায় মামলা করেননি স্বজনরা।

তালিকা তৈরি সন্ত্রাসীদের
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বলেন, রাউজানে সন্ত্রাসীদের অবস্থান ও অপরাধপ্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার গুগল ম্যাপ তৈরি করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সরকার। তাদের কারণেই রাউজানের সার্বিক পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।

ঈশান/মখ/বেবি

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page