চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী থেকে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বোট মালিকসহ ১৮ জন জেলে ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলে পরিবারগুলো। এমনকি নানা শঙ্কায় আঁতকে উঠছেন পরিবারের সদস্যরা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার নতুন ফিশারিঘাট থেকে এফ বি খাজা আজমীর নামের ফিশিং বোটটি সাগরে যায়। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে চট্টগ্রামের সদরঘাট নৌ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৫৫৫) করেছেন বোট মালিকের স্ত্রী সেলিনা আক্তার(৪০)।
এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী আলী আকবর (৪৯) দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার মালিকানাধীন ফিশিং বোটের (রেজিস্ট্রেশন নং এফ-৯৭৫৪) অধীনে মাঝি আবু তাহের (৫৫), স্টাফ জামাল (৪৫), বাবুর্চি রুবেলসহ (৩৫) আরও ১৪ জন সাগরে মাছ ধরতে বের হন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্ত্রী সেলিনা আক্তারের সঙ্গে আলী আকবরের সর্বশেষ ফোনালাপ হয়। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত ফোননম্বরসহ অন্য স্টাফদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তাদের আর কোন সন্ধান মিলছে না।
৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে সেলিনা আক্তার বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম সাগরে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কিন্তু টানা ১০ থেকে ১১ দিন অপেক্ষার পরও তাদের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
ফলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। স্বামী ও বোটের সকল মাঝিমাল্লা এখনো নিখোঁজ। পুলিশও কোনো খোঁজ দিতে পারছে না। এ নিয়ে আমরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এমনকি নানা অশুভ শঙ্কায় আঁতকে উঠছে জেলেদের পরিবারগুলো।
স্বামী ও বোটের মাঝিমাল্লাদের খোঁজ না পেয়ে চোখে ঘুম নেই পরিবারের সদস্যগুলোর। কপালজুড়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। প্রতিদিন আশায় বুক বেঁধে ঘাটে গিয়ে দাঁড়ান স্বজনরা, হয়তো ফিরবেন প্রিয়জনেরা। কিন্তু টানা ১৭ দিনেও ফিরে আসেননি সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ১৮ জেলে।
চোখে অশ্রু, কণ্ঠে কাঁপন নিয়েই নতুন ফিশারিঘাটে স্বামীকে খুঁজে ফিরছেন বোটের স্টাফ আবু তাহেরের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, প্রতিদিন সাগর পানে চেয়ে থাকলেও স্বামী ফিরছে না। স্বামীর সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়েছিল গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে।
ফোনে স্বামী বলেছিলেন, ভোরের আগে সাগরের অনেক দূরে চলে যাব, নেটওয়ার্ক পাবে না। সেটিই ছিল দু‘জনের শেষ কথা। তারপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ। এরপর থেকে দিশেহারা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছে না। অথচ সাগরে মাছ ধরতে গেলে ৮-১০ দিনের মধ্যে ফিরে আসে মাঝিমাল্লারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিডি‘র তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফ বলেন, ১৩ তারিখের পর থেকে তাদের মোবাইলের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে খোঁজাখুজি চলছে। দেশের প্রতিটি থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। কোস্টগার্ডকেও এ বিষয়ে অবহিত করার হয়েছে।
You cannot copy content of this page