রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

সিঙ্গাপুর যেতে চট্টগ্রাম বন্দরের খালি কন্টেইনারে ট্রাকচালক

সিঙ্গাপুর যেতে চট্টগ্রাম বন্দরের খালি কন্টেইনারে উঠে পড়ে মো, লিটন মোল্লা (২৩) নামে এক ট্রাকচালক। বন্দরের কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারলেও মাঝসাগরে তাকে আটক করেন জাহাজের নাবিকরা। পরে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরে এসে লিটন মোল্লাকে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।

এ ঘটনায় লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ। এ মামলায় লিটন মোল্লাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (৭ আক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানান বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিদর্শক নাছির উদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, অভিযুক্ত লিটন মোল্লা পেশায় ট্রাকচালক। সে মাগুরার শ্রীপুর থানার ইছাপুর গ্রামের মো. ফারুক মোল্লার ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে জাহাজে করে সমুদ্রপথে বিদেশযাত্রার পরিকল্পনা করছিল লিটন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে ভোটার আইডি কার্ড, ছবি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দিয়ে বন্দরে গেট পাস পাওয়ার জন্য আবেদন করে সে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লিটনের ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে ওইদিন বিকেলে প্রবেশ কার্ড ইস্যু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এই পাস দিয়ে বন্দরের সিসিটি-২ গেট দিয়ে ওইদিনই বিকেল ৫টা ২৩ মিনিটে বন্দরে প্রবেশ করে লিটন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে পেছনের রেলিং বেয়ে এমভি হাইয়ান ভিউ নামে জাহাজে উঠে পড়ে। পরে সেখানে একটি খালি কন্টেইনারে ঢুকে পড়ে লিটন। বিষয়টি বন্দরের কেউ বুঝতে না পারলেও জাহাজটি মাঝ সাগরে পৌঁছার পর পানির তৃষ্ণায় কাতর হয়ে কন্টেইনার থেকে বেরিয়ে আসে লিটন। সেসময় নাবিকদের নজরে এলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করা হয়। এরপর বৃহ¯পতিবার (৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরে আসে জাহাজটি।

পরে অভিযুক্ত লিটনকে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে লিটনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বন্দর থানায় হস্তান্তর করে কর্তৃপক্ষ। এসময় লিটনের কাছ কাছ থেকে বন্দরে প্রবেশের একটি কার্ড, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, নগদ তিন হাজার টাকা, একটি ছোট বাটন মোবাইল সেট ও একটি ওয়ালেট জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে বন্দর থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, শুক্রবার মধ্য রাতে অভিযুক্ত লিটনকে বন্দরের কর্মকর্তারা থানায় হস্তান্তর করেন। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বন্দর থানার ওসি বলেন, ট্রাক ছাড়া শুধুমাত্র পাস ইস্যু করেই অভিযুক্ত লিটন বন্দরে ঢুকে পড়েছিল। ঘটনার দিন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদর্শন করায় তাকে একদিনের পাস দেওয়া হয়েছিল। সে আগে হয়ত বন্দরে প্রবেশ করেছিল। এ কারণে তার নিয়মকানুন জানা ছিল। সবমিলিয়ে সে পূর্ব পরিকল্পনায় ঝুঁকিপূর্ণ এ যাত্রা করেছিলেন।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি এমভি ইন্টিগ্রা নামে মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী একটি জাহাজে করে মালেয়েশিয়ায় চলে যায় এক কিশোর। এরপর ১৭ জানুয়ারি রাতে মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর থেকে ওই কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পেনাং সমুদ্র বন্দরে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া খালি কন্টেইনারের ভেতর থেকে একজনের মরদেহ পাওয়া যায়।

বিএম ডিপো থেকে কন্টেইনারটি প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে যায়। এরপর ৬ অক্টোবর সেটি মালয়েশিয়াগামী একটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। পরে পেনাং বন্দরে কন্টেইনারটি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশের বন্দরে যাওয়া কন্টেইনারে গত পাঁচবছরে আরও তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।

এভাবে বন্দরের নিরাপত্তা ভেদ করে একের পর এক খালি কন্টেইনারে বিদেশ যাত্রার বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে ভাবমূর্তি হারাচ্ছে দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর। এসব ঘটনায় বন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে মত প্রকাশ করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী শ্রমিক-কর্মচারী লীগের (সিবিএ) সভাপতি মো. মীর নওশাদ বলেন, দেশের সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার এবং অর্থনীতির হৃদপিন্ড চট্টগ্রাম বন্দর। সুতরাং এই বন্দরের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে হওয়া উচিত। কিন্তু বন্দরের নিরাপত্তা ভেদ করে খালি কন্টেইনারে যেভাবে একের এক লোক বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা ঘটছে, তাতে বন্দরের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এভাবে হতে থাকলে বিশ্বের বন্দর ব্যবহারকারীরা এক সময় এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) লেঃ কর্নেল মোস্তফা আরিফ-উর রহমান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, বন্দরের নিরাপত্তা কম সেটা আসলে ঠিক নয়। বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকে হয়তো অসদোপায় অবলম্বন করছেন। বিষয়টি আমাদেরও ভাবাচ্ছে। ফলে নিরাপত্তা আরো জোরদার করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

ঈশান/মশ/সম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page