প্রায় ২৫ ঘণ্টা পুড়ে নিভল চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) পোশাক কারখানার ভয়াবহ আগুন। আগুনে আটতলা বিশিষ্ট অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার ভবনটি প্রায় স¤পূর্ণভাবে ছাই হয়ে গেছে। তবে আগুনে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা প্রায় ১৭ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
পরে ফায়ার সার্ভিসের ওই ১৭টি ইউনিট আরও ৮ ঘন্টা পানি ছিটিয়ে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয়। চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত পোশাক ও সরঞ্জাম তৈরির এই কারখানায় প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে বলে জানান তিনি।
এদিকে যে ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে সেটির অগ্নিনিরাপত্তা সনদই ছিল না বলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা সনদ পেতে আবেদন করা হয়েছে কেবল। তবে নিয়ম অনুযায়ী এখনো পরিদর্শন করা হয়নি। তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।
তিনি বলেন, ভবনের আশপাশে যে ন্যুনতম জায়গা রাখতে হয়, সেটির দুই পাশ দিয়ে আগুন নেভানোর সুযোগ ছিল না। এ কারণে আগুন নির্বাপণ করতে বেগ পেতে হয়েছে। অন্য দুই পাশ থেকে চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।
সিইপিজেডে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. জাকির বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুরোপুরি নির্বাপণ করা যায়নি। আগুন পুরোপুরি নির্বাপনে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কাজ করেছে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও বলা যাচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
তিনি জানান, বর্তমানে আগুন লাগা ভবনটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এখনও ভবনটির ভেতর কিছু ফ্লোরে আগুন জ্বলছে। অথচ আগের দিনও ওই ভবনে এক হাজারের বেশি লোক একসঙ্গে কাজ করেছেন।
সিইপিজেড কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক আশেক মুহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় ১ হাজার ৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত ছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে এবং শ্রমিকরা ভবনটি থেকে নেমে যান। আগুন প্রথমে ওপরের তলায় লাগার কারণে শ্রমিকরা দ্রুত এবং নিরাপদে বের হতে পেরেছে। এতে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে বৃহ¯পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত কারখানাটিতে আগুন লাগে। প্রথমে অষ্টম তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়, পরে তা দ্রুত সপ্তম ও ষষ্ঠ তলায় ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্টেশন থেকে মোট ১৭টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তবে আগুনের ভয়াবহতার কারণে তাদের বেগ পেতে হয়। শুরু থেকেই সিইপিজেডে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর একটি টিম ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয়।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নৌবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট এবং পরবর্তীতে বিমানবাহিনীর একটি ইউনিটও অংশ নেয়। সন্ধ্যার পর আগুন ক্রমে নিচতলায় পৌঁছে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র উত্তাপে আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পরিবেশ অসহনীয় হয়ে ওঠে।
বৃহ¯পতিবার রাত ১০টার দিকে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু তাতেও আগুন নেভেনি। আগুনে জ্বলতে জ্বলতে ভবনটির কোনো কোনো অংশ ধসে পড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা ভবনটি ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন।
You cannot copy content of this page