৮০ বছর পর ১৮ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ চট্টগ্রামের কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র (ওয়ার সিমেট্রি) থেকে উত্তোলন করে নিজেদের দেশে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এসব জাপানি সৈন্য নিহত হন।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে জাপান সরকারের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসব দেহাবশেষ নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ কাজে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহায়তা দিয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ‘ওয়ার সিমেট্রি থেকে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাপান সরকারের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলটি গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে অবস্থান করে সমাধি থেকে দেহাবশেষ উত্তোলন সম্পন্ন করেন। দেহাবশেষ উত্তোলন শেষে গত ২৮ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল যথাযোগ্য সামরিক মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করে।

এরপর সেগুলো জাপানের প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর পুরো কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও খননকাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক।

চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া বাদশা মিয়া সড়কে ‘ওয়ার সিমেট্রি, চট্টগ্রাম’ হিসেবে পরিচিত এ কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্রের অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৪৪-৪৫ সালের দিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এ সমাধিসৌধ প্রতিষ্ঠা করে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের ৭০০টিরও বেশি সমাধি আছে। এর মধ্যে ১৮ জন জাপানি সৈনিকের সমাধি। বিশ্বজুড়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিক্ষেত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ‘কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন’।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ২৩ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলন করে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের সবার পরিচয় সমাধির ওপর লিপিবদ্ধ থাকায় জাপানে তাদের স্বজনদের শনাক্ত সহজ হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য। কুমিল্লার ময়নামতিতেও দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খনন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক।

চট্টগ্রাম থেকে দেহাবশেষ উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘কুমিল্লায় প্রত্যেকটি সমাধির ওপর সৈনিকের নেমপ্লেট ছিল। চট্টগ্রামে সেটা নেই। এখানে সমাধিক্ষেত্রে একটি জায়গায় একটা নেমপ্লেটে ১৮ জনের নাম লেখা আছে। কিন্তু কোনটা কার সমাধি সেটা চিহ্নিত করা নেই। আমরা ১৮টি সমাধিই খনন করেছি। সবগুলোতে মাথার খুলি, কঙ্কাল, কোমড়ের অংশ, আঙুলের অংশসহ আরও বিভিন্ন দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে কুমিল্লার মাটি লবণাক্ত না। সেজন্য সেখানে খননকাজ সহজ ছিল। চট্টগ্রামে সেটা একটু কঠিন ছিল এবং সময়ও বেশি লেগেছে।’

খননে পাওয়া দেহাবশেষ নিয়ে জাপানের প্রতিনিধিদল ‘খুবই সন্তুষ্ট’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সোমবার উনাদের বিমানে তুলে দিয়ে এলাম। দেহাবশেষগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে যাতে ভেঙ্গে না যায়, সেজন্য তুলা দিয়ে মুড়িয়ে বাক্সে নেওয়া হয়। আমি নিজেই সেগুলো প্যাকিং করি। এর মধ্যে কয়েকটা হাতে করে এবং আর কিছু কার্গো বিমানে পাঠানো হয়েছে।’

জাপানে নিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেহাবশেষগুলোর পরিচয় শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে দেওয়া হবে বলে দেশটির প্রতিনিধি দলের বরাতে জানান কাজী সাজ্জাদ আলী জহির।

ঈশান/খম/সুম