শনিবার- ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বালু উত্তোলনে ধ্বংসের মুখে শাহপরীর দ্বীপ জেটি

সংস্কার হয়নি ২১ বছরেও

বালু উত্তোলনে ধ্বংসের মুখে শাহপরীর দ্বীপ জেটি

নাফনদী থেকে বালু উত্তোলনে কারণে ধ্বংসের মুখে পতিত হেচ্ছে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর জেটি। ২০০৪ সালে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের পর ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জেটির আর কোনও সংস্কার হয়নি। এতে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে জেটিটি। ধসে পড়েছে জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কার পাশাপাশি হুমকির মুখে পর্যটক ও দ্বীপবাসী।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ অংশের নাফনদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের নিচু এলাকা। প্রায় হাজার একর সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ভরাটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে শাহপরীর দ্বীপের পর্যটন জেটিসহ এলাকাটি। বালু উত্তোলনের কারণে জেটির খুঁটির আশপাশ দেবে যাচ্ছে। এতে জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। এমনকি ভবিষ্যতে পুরো শাহপরীর দ্বীপটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। মেসার্স চায়না হারবাল নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান নাফনদী থেকে এ বালু উত্তোলনের কাজ চলমান রেখেছে। যদিও সরকার পতনের আগে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছিল স্থানীয় লোকজন।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে পর্যটকসহ জেলেদের নৌযান এবং মিয়ানমারের পশু করিডোর সুবিধা বাড়ানোর লক্ষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেটিটি নির্মাণ করেছে। এ জেটিতে বিশ্রামাগার, শৌচাগার ও চারটি সিঁড়ি রয়েছে। এছাড়াও জেটি ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে জেটিটির পাশে রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিং স্পট। পরে জেটিটি ২০০৪ সালে কক্সবাজার জেলা পরিষদকে স্থানান্তরিত করলে, সেটি ২০০৬ সালে উদ্বোধন করে উন্মুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন :  ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) আবহে সাজলো চট্টগ্রাম

জানা যায়, টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে নাফনদী নির্মাণ করা হয়েছে জেটিটি। সেখানে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের চলাচল রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপের জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে বালিতে পড়ে রয়েছে। পাশাপাশি ভাঙন ঝুঁকিপূর্ণ জেটি দিয়েই চলাচল করছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। জেটির মুখে দায়িত্ব পালন করছে সীমান্তারক্ষী বাহিনী বিজিবির সদস্যরাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি সদস্য এ সময় বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জেটিতে বড় ধরনের কোনও যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা সত্য জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা লোকজনকে বেশি ভিড় না করতে অনুরোধ করছি। জেটির অবস্থা খুব নাজুক, যেকোনও সময় ধসে পড়তে পারে।

আরও পড়ুন :  চবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে চিহ্নিত ৯ অস্ত্রধারী

মোহাম্মদ ফয়সাল নামে দ্বীপের একজন বাসিন্দা বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাফনদীর কিনারায় শাহপরীর দ্বীপের জেটিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৬ সালে এটি উদ্বোধনের পর থেকে আর কখনও সংস্কার করতে দেখা যায়নি। ফলে জেটির রেলিং কনস্ট্রাকশন যা আছে সব ভেঙে যাচ্ছে। জেটির ভয়াবহ অবস্থা। নাফনদীর বুকে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন এখানে। এছাড়া এই জেটি দিয়ে সেন্টমার্টিনও চলাচল করে থাকেন অনেকে। তাই এটি খুব দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত নাফনদী থেকে বেজার প্রকল্প সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বিশার নিচু জমি ভরাটের জন্য বালু উত্তোলনের কারণে জেটিটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শুধু জেটি না, এত বেশি পরিমাণের বালু উত্তোলন করেছে যে, পুরো দ্বীপই হুমকির মুখে পড়তে পারে।’

এ ব্যাপারে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ ও শাহপরীর দ্বীপের ৭,৮,৯ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে শত শত পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। ফলে জেটিতে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন পেশাজীবী শত পরিবারের। জেটিতে দৈনিক ১০/২০ টি পরিবারের সদস্য বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে সংসার চালাচ্ছে। এই জেটি ধসে পড়লে কষ্টে পড়বে পুরো দ্বীপবাসী। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই জেটি সংস্কারের।’

আরও পড়ুন :  মিলির অপেক্ষায় শাকিব, চলছে রেজিস্ট্রেশন

টেকনাফ উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা রবিউল হোসাইন বলেন, ‘২ কোটি ১০ লাখ টাকায় নির্মিত শাহপরীর দ্বীপের জেটিটি জেলা পরিষদকে ২০০৪ সালে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন থেকে জেটি সংস্কার ও দেখভালের দায়িত্ব তাদের (জেলা পরিষদের)।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ জেটির বিষয়ে জেলা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি অতি দ্রুত সংস্কারের কাজ করবে।’

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ বলেন, টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ জেটি সংস্কারের বিষয়ে এক বৈঠকে এলজিইডিকে একটি চিঠি পাঠানোর আলোচনা হয়েছে। চিঠি পাঠানো হলে, জেটি সংস্কারের বাজেট নির্ধারণ করে দেবে তারা। এরপর বলা যাবে জেটিটির সংস্কার করতে কী পরিমাণ ব্যয় হবে। তারপর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন