বৃহস্পতিবার- ২১ আগস্ট, ২০২৫

চট্টগ্রামে কোথাও মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন!

ভোগান্তিতে ক্রেতারা

চট্টগ্রামে কোথাও মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন

ট্টগ্রামে খুচরা থেকে পাইকারি বাজার কোথাও মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন বা ভোজ্যতেল। কোথাও কোথাও কদাচিৎ মিললেও ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম। চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এতে অস্থিরতা বিরাজ করছে ক্রেতাদের মধ্যে।

ক্রেতারা জানান, গত ডিসেম্বরেও বোতলজাত সয়াবিন বা ভোজ্যতেলের সংকট তৈরী হয়। এরপর প্রতি লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়নো হয়। এরপর বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকার জায়গায় বিক্রি হয় ১৭৫ টাকায়। যা আগে ছিল ১৬৭ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৭ টাকায়।

এ ছাড়া খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকায়। এরপরও এখন জানুয়ারিতে এসে একই ক্রাইসিস। তার মানে কি ফের দাম বৃদ্ধিও পাঁয়তারা। এ নিয়ে চরম অস্থিরতায় রয়েছেন ক্রেতারা।

আরও পড়ুন :  শতকোটির বাবরের পৌনে ২ কোটির সম্পদ পেল দুদক!

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা বোতলজাত সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ পাচ্ছেন না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিরা মাঝেমধ্যে অল্প পরিমাণ তেল সরবরাহ করলেও বাসমতি চাল-আটা-ময়দা নিতে হবে বলে অদ্ভুত শর্ত দিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম মহানগরীর ঝাউতলা বাজারের ব্যবসায়ী সকির আহমেদ বলেন, যে কয়টা প্রতিষ্ঠান তেল আমদানি ও পরিশোধন করে, মূলত তাদের হাতে সবাই জিম্মি। তারা বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করছে না। মাঝেমধ্যে যে পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে, তাতে অদ্ভুত সব শর্ত জুড়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ক্রেতারা দিনভর তেল চায়, কিন্তু সরবরাহ না পাওয়ায় ক্রেতাদের দিতে পারি না। উৎপাদন পর্যায়ে পণ্যটির সরবরাহ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় তারা ক্রেতাদের কাছে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে পারছেন না।

দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ী মো. ইউনুস গণি বলেন, সামনে রমজান, কিন্তু মিল মালিকরা এখন তেল সরবরাহ বন্ধ রেখে সংকট সৃষ্টি করেছেন। বাজার তদারকি বৃদ্ধি না করলে রমজানে স্থিতিশীল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন :  শতকোটির বাবরের পৌনে ২ কোটির সম্পদ পেল দুদক!

ব্যবসায়ী ও ভোজ্য তেলের ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারে ফের পণ্যটির দাম বৃদ্ধি করতে কৌশল নিয়েছে মিল মালিকরা। পণ্যটির দাম বৃদ্ধির জন্য গত ৬ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন তারা।

তবে চাপের মুখে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বন¯পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ফলে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখছে না মিল মালিকরা। সরবরাহ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রাখছেন তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধন করে বিপণন করছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে এস আলমের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমিত করায় বর্তমানে প্রথম সারিতে আছে সিটিসহ চারটা গ্রুপ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে ভোজ্য তেলের বাজার।

সরবরাহ বন্ধ রেখে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির বিষয়ে জানতে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহার মুঠোফোনে একাধিবার ফোন করে যোগাযোগ করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

আরও পড়ুন :  শতকোটির বাবরের পৌনে ২ কোটির সম্পদ পেল দুদক!

তবে ভোজ্যতেলের শীর্ষ আরেকটি আমদানি ও রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে এটা সঠিক নয়। তেল আসছে, প্যাকিং হচ্ছে, মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। সংকট যেটা হয়েছে, আমাদের ধারণা কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় সেটা সামাল দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, ওরা গত ডিসেম্বরের শুরুতেও একই কৌশলে বাজারে সংকট তৈরী করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়িয়েছে। একবার সুবিধা পেয়ে এখন আবারও সেই একই কাজ করছে। একবার সুযোগ পেয়ে এটা বারবার করছে তারা। এভাবে বার বার সুযোগ দিলে বার বার এই কাজ করবে ব্যবসায়ীরা। তাদের সুযোগ না দিয়ে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page