
আমার বাবা যদি বেঁচে না থাকে। যদি মেরে ফেলেন, তাহলে অন্তত শেষ চিহ্ন লাশটা আমাদের ফেরত দিন। একযুগ আগে গুমের শিকার চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা সিরাজ চেয়ারম্যানের ছেলে সাংবাদিক আজীম অনন এভাবে আর্তি জানান।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি নেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম শহিদুল আলম সিরাজের সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধনে ছেলে আজীম অনন এভাবে আর্তি জানান। তার আর্তি আবেগাক্রান্ত করে উপস্থিত সকলকে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ সালের ৬ মার্চ বিএনপির ঘোষিত চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন এ এস এম শহিদুল আলম সিরাজ। তার সন্তান সাংবাদিক আজীম অননের সহকর্মীরা এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে আজীম অনন বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকা গিয়েছিলেন আমার বাবা। ঢাকা থেকে আর ফিরে আসেননি। গত ১৫ বছর ধরে গুম, খুনের শিকার হয়েছেন অনেকে। আয়নাঘরে নিয়ে গুম করা হয়েছে অনেক বিরোধী মতের মানুষকে, যার মধ্যে আমার বাবা সিরাজ চেয়ারম্যানও আছেন।
আজীম অনন বলেন, আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বাবার কোনো সন্ধান পাইনি। আমি জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গেলাম, আমাকে বলা হলো আপনার বাবা জীবিত না কি মৃত ? আমি কী জবাব দেব। আমাকে বলল- আপনি সিদ্ধান্ত দেন। আমি কীভাবে সিদ্ধান্ত দেব, আমি তো জানিও না আমার বাবা বেঁচে আছেন না কি তাকে মেরে ফেলেছে।
১২ বছর ধরে আমার মা ও ছোট ভাই আমার বাবার অপেক্ষায় আছে। আমরা আয়নাঘর থেকে অনেককে বের হতে দেখছি। কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় ৬ মাস পার হয়ে গেলেও বাবার সন্ধান পাইনি। আমি আমার বাবাকে জীবিত হোক কিংবা মৃত, তার শেষ অবস্থানটুকু জানতে চাই। বাবার শেষ চিহ্নটুকু নিয়ে আমার পরিবার সারাজীবন বেঁচে থাকবে,-বলেন আজীম অনন।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ স¤পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে গুম হয়েছেন সিরাজ চেয়ারম্যান। অনন ছোট ছিল তখন, এখন সে তার বাবার সন্ধানে মাঠে নেমেছে। বোয়ালখালীর বাঁচা চেয়ারম্যানসহ অনেকে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে তারা গুম হয়েছেন। আমরা বিগত দিনেও সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। আমরা মামলা, হামলার শিকার হয়ে, জেলে গিয়েও ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষুকে ভয় করিনি। সাহসের সঙ্গে গত ১৭ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। গুমের বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে গুম হয়েছেন, তাদের সর্বশেষ অবস্থানটুকু জানানো দরকার।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিএমইউজে) সাধারণ স¤পাদক সালেহ নোমানের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক ইমরান এমির পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজা, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, সাংবাদিক ওয়াহিদ জামান, দৈনিক দিনকালের ব্যুরো প্রধান হাসান মুকুল, জামালখান ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ স¤পাদক তৌহিদুল সালাম নিশাদ, অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান, জামিল উদ্দীন রায়পুরী, নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল।