শনিবার- ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

কেইপিজেড ছেড়েছে বন্যহাতির দল, আছে ফিরে আসার আতঙ্কও

কেইপিজেড ছেড়েছে বন্যহাতির দল, আছে ফিরে আসার আতঙ্কও

ত এক দশক বছর ধরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কোরিয়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) ও আশপাশের এলাকায় তান্ডব চালিয়ে আসছে বন্যহাতির একটি দল। কিন্তু সেই হাতির দল এখন আর নেই, কেইপিজেড ছেড়ে চলে গেছে পূরণো আবাসস্থল চুনতি অভয়ারণ্যে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে এ তথ্য জানান কেইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বন্যহাতির দল তাদের পূরণো আবাস চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরে গেছে বলে জানিয়েছেন এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) সদস্যরা। বনবিভাগের কর্মকর্তারাও আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, হাতিগুলো এখন আর কেইপিজেডে নেই।

তিনি বলেন, হাতিগুলোকে তাদের পূরণো আবাস চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরিয়ে নিতে গঠন করা হয় ইআরটি। কেইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। বন বিভাগ এই টিমকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ইআরটি হাতিগুলোকে চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরিয়ে নিতে মূল ভুমিকা পালন করে।

এদিকে হাতিগুলো চলে যাওয়ার খবরে আনায়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দুই লাখেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে আনন্দ, স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তারা ইআরটির সদস্যদের জন্য বিশেষ দোয়া করছে। তবে হাতিগুলো আবারও ফিরে আসার ভয়ও যেন কাটছে না তাদের।

আনোয়ারা উপজেলার কেইপিজেড এলাকার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, বিগত দুই শত বছরের ইতিহাসে কেইপিজেড দেয়াঙ পাহাড়ের টিলা কিংবা এই এলাকায় কখনো বন্যহাতি বসবাস করার কথা আমাদের পূর্ব পুরুষের মুখে শুনিনি। আমরা নিজেরাও দেখিনি।

কেইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর সেখানে বড় বড় পানির লেক তৈরি হলে গত এক দশক আগে হাতিগুলো আসে। এই সময়ে হাতিগুলো কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানের দৌলতপুর, দক্ষিণ শাহমীরপুর এবং আনোয়ারার গুয়াপঞ্চক, বৈরাগ, মোহাম্মদপুর, ফকিরখিল, বটতলী, হাজিগাঁও, গুচ্ছগ্রামে নেমে একের পর এক তান্ডব চালাতে থাকে।

এই সময়ে হাতির আক্রমণে ২৪ জন নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছেন অনেকে। আহতদের মধ্যে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। হাতির কারণে তিন শতাধিক পরিবারের বসতঘর ভাঙচুর এবং শত শত একর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ (শনিবার) এই হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হলে ওই দিন ভোর থেকে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

পরবর্তীতে ২৭ মার্চ আনোয়ারা টানেল সংযোগ সড়ক অবরোধ করে হাতি নিরসনে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এ সময় বন বিভাগের আশ্বাসের পর বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়। এখন বনবিভাগের প্রচেষ্টায় ও কেইপিজেডের উদ্যোগে হাতিগুলো তাদের নিজেদের জায়গায় চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরে গেছে। আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার মানুষ এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী মোজাদ্দেদ বলেন, হাতিগুলো সাধারণ মানুষের জন্য সাক্ষাত যমদূত ছিল। হাতিগুলো এখন চুনতি অভয়ারণ্যে তাদের নিজস্ব বাসস্থলে ফিরে গেছে। খবরটি আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির। তবে আবার যে হাতিগুলো ফিরবে না সেটার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই এলাকার হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পক্ষে আমাদের দাবি একটাই হাতিগুলো যাতে আর আনোয়ারায় ফিরতে না পারে সে ব্যাপারে যেন বন বিভাগ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, দেয়াঙ পাহাড় কেইপিজেড এলাকায় ৫টি হাতির একটি দল থাকার কথা শোনলেও আমরা দেখেছি ৪টি হাতি। হাতিগুলোর মধ্য দুই মাস আগে ১টি হাতি চুনতি অভয়ারণ্যে চলে আসে। এরপর আমাদের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) সহায়তায় ৩ দিন আগে দুটি হাতি আর গত ১৩ এপ্রিল শনিবার দিবাগত রাতে ১টি হাতি দেয়াঙ পাহাড় থেকে তৈলারদ্বীপ সাঙ্গু নদী পার হয়ে চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরে গেছে।

হাতিগুলো ফিরে আসার প্রশ্নে তিনি বলেন, হাতি ফিরে আসতে চাইলে কারো আটকানোর সাধ্য নেই। তবে হাতিগুলো যাতে খুব সহজেই ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তৈলারদ্বীপ এলাকায় ইআরটি টিমের সদস্যরা নিযুক্ত থাকবেন। পুরো বিষয়টি বন বিভাগের নজরে রয়েছে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page