
ঈদুল ফিতর নিয়ে টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার জট বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা ৪৩ হাজার টিইইউএস (একক) ছাড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে জটিল অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৫ এপৃল) এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি থাকায় বন্দর ইয়ার্ডে কর্মীর সংকট ছিল। এ কারণে বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক কনটেইনার বন্দরে এসে পৌঁছানোর কারণে জট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে নববর্ষের ছুটি সেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তবে আমরা কনটেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইয়ার্ডগুলোতে দ্রুত কনটেইনার খালাসের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে জট কাটিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে।
বন্দরের তথ্যমতে, ঈদের আগে গত ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ২৯০ টিইইউএস। ২৮ মার্চ কনটেইনার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৮৫৬ টিইইউএসে। এরপর গত ২৯ মার্চ থেকে দফায় দফায় কনটেইনার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেদিন বন্দরে কনটেইনার সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৮৬৩ টিইইউএস।
এরপর গত ৩০ মার্চ ৩১ হাজার ৭০৭ টিইইউএস, ৩১ মার্চ ৩৩ হাজার ৫০৫ টিইইউএস, ১ এপৃল ৩৪ হাজার ৫১৮ টিইইউএস, ২ এপৃল ৩৪ হাজার ৫৭৯ টিইইউএস, ৩ এপৃল ৩৫ হাজার ৩৪৮ টিইইউএস, ৪ এপৃল ৩৭ হাজার ৭৬৫ টিইইউএস, ৫ এপৃল ৪০ হাজার ৯৪৮ টিইইউএস, ৬ এপৃল ৪৩ হাজার ৩৬৫ টিইইউএস এবং ৭ এপৃল কনটেইনার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৯২ টিইইউএসে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা স্বাভাবিক সীমা ছাড়িয়ে যায়। যার অধিকাংশই ফুল লোডেড কনটেইনার (এফসিএল)। এসব কনটেইনারে ছোলা, ডাল, মসলার আইটেমসহ বিভিন্ন পণ্য ছিল। মূলত পণ্যের আমদানিকারকরা বন্দর ইয়ার্ডকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই সময় বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা ৪১ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে যায়।
তখন অবস্থা বেগতিক দেখে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাছে চিঠি ইস্যু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে ৯ মার্চের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি না নিলে ১০ মার্চ থেকে এফসিএল কনটেইনার ভাড়া চার গুণ বেশি আদায়ের কথা বলা হয়। এরপর গত ৩ মার্চ থেকে আমদানিকারকরা জোরেশোরে তাদের কনটেইনার সরিয়ে নিতে শুরু করে। যে কারণে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে। ফলে গত ১১ মার্চ সর্বনিম্ন হিসাব অনুযায়ী বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯০৬ টিইইউএস।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে ২০ ফুট ও ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (একক) কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। ৩০ থেকে ৩২ হাজার টিইইউএস কনটেইনারকে স্বাভাবিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে সে সংখ্যা ৪৩ হাজার ১৯২ টিইইউএস ছাড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেন ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটিতে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তাই অনেক আমদানিকারক পণ্য খালাস করতে পারেননি। মঙ্গলবার থেকে ব্যাংক, বিমা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আবারও পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার জট কমে আসবে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, টানা ছুটির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছরই এমনটা হয়। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কনটেইনার জট কেটে যাবে। এ বিষয়ে বন্দরকে যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে করে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বজায় থাকবে।
সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন সিদ্ধান্তটি ৯ এপৃল থেকে কার্যকর হয়। বন্দরের ইয়ার্ডে যে কনটেইনারগুলো জমে আছে সেগুলো ৯ এপৃলের আগে খালাস করতে পারলে বন্দর, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সবাই লাভবান হতো।