শনিবার- ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

অন্নপূর্ণা-১ জয়ের পর আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাবর আলীর

অন্নপূর্ণা-১ জয়ের পর আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাবর আলীর

২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উপরে, হিমবাহ আর খাড়া ঢালে দাঁড়িয়ে ছিল লাল-সবুজ পতাকা হাতে এক বাংলাদেশি। তার নাম বাবর আলী। আর সেই পর্বতশৃঙ্গের নাম অন্নপূর্ণা-১। যা উচ্চতায় দশম হলেও কৌশলগত দিক থেকে দুনিয়ার অন্যতম ভয়ঙ্কর।

আর এই অন্নপূর্ণা-১ ছিল বাবর আলীর আট হাজারি তৃতীয় পর্বতশৃঙ্গের জয়। এর আগে তিনি জয় করেছিলেন এভারেস্ট ও লোৎসে। সেই বাবর আলীর স্বপ্ন এখন আরও এগিয়ে যাওয়ার। তিনি চান বাকি আট-হাজারি ১১ পর্বতের চূড়ায়ও উড়বে বাংলাদেশ।

৭ এপৃল নেপালের ভয়ংকর তুষারপ্রবণ ও খাড়া অন্নপূর্ণা-১ জয় করে ইতিহাসে নিজের নাম লিখিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপৃল) চট্টগ্রামে ফেরেন বাবর আলী।

বৃৃহস্পতিবার (১৭ এপৃল) এ তথ্য জানান বাবর আলীর ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সর উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বে দেশকে ব্র্যান্ডিং করার শক্তিশালী মাধ্যম হলো অ্যাডভেঞ্চার ¯েপার্টস। পর্বতারোহণের মতো চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ জয় করে বাবর দেখাচ্ছেন, আমরা আর শুধু ভেতো বাঙালি নই। আমরাও পারি পর্বতের মতো অটল হয়ে দাঁড়াতে।

ক্লাবের সভাপতি ফরহান জামান বলেন, বাবরের ধারাবাহিক সফলতা প্রমাণ করে, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি বিশ্বের মাত্র ৭১ জন পর্বতারোহীর তালিকায় নাম লেখাতে পারেন। যারা সব ১৪টি আট-হাজারি পর্বত জয় করেছেন। বাবর আলীর মুখেও সেই একই কথা।

বাবর আলী বলেন, আমি তো অনেক বছর ধরে পর্বতে যাচ্ছি, জীবনে মোট যত তুষার ধস দেখেছি এই একটা পর্বতে দেখেছি এর চেয়ে কয়েকগুণ। সবাই চায় কত অল্প সময় থেকে অভিযানটা শেষ করে আসবে। কারণ যত বেশি সময় থাকবেন তত ঝুঁকি থাকে। লাইফ রিস্ক তত বাড়বে। এই পর্বতে তুষার ধস হয়।

বাবর আলী বলেন, অন্নপূর্ণা-১ এর অভিযানের সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল ক্যা¤প-২ থেকে ক্যা¤প-৩ এর পথ। এই পথের খাঁড়া ঢাল বেয়ে সবসময় তুষারধস, পাথর খসে পড়া চলতেই থাকে। এসবকে অতীব সাবধানে এড়িয়ে পর্বতারোহীদের আরোহণ করতে হয়। এছাড়া সামিট পুশ (সর্বশেষ ক্যা¤প থেকে চূড়াপাণে যাত্রা) আমাদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে। ৬ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৩ নম্বর ক্যা¤প থেকে প্রায় ১৭০০ মিটার একটানা আরোহণ করে চূড়ায় পৌঁছাতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা।

আর ফিরতি পথে সময় লেগেছে আরো ৯ ঘণ্টা। সাড়ে ২৬ ঘণ্টার এই সামিট পুশ শরীরের শেষ শক্তিটুকুরও পরীক্ষা নিয়েছে। আমি জীবনে পর্বতারোহণসহ ছোট-বড় নানান অ্যাডভেঞ্চার করেছি। তবে অন্নপূর্ণা-১ পর্বতের মতো কঠিন পরীক্ষা পূর্বে আমাকে দিতে হয়নি। তবে এত কিছুর পরও ঠিকঠাকভাবে আরোহণ করে দেশে আপনাদের মাঝে ফিরতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। পৃষ্ঠপোষকসহ বাকি সবার সহযোগিতা পেলে বাকি ৮ হাজারি মিটার পর্বতগুলোতে আমার পদচারণা অব্যাহত রাখতে পারবো।

পর্বতারোহী বাবর আরো বলেন, আমি নিজেও তুষার ধসে পড়েছি, যদিও একেবারে শেষের দিকে। আমার দলে মোট চারজনের মধ্যে একজন এস্তানিয়ান, তুষার ধসে পড়ে যান। ও অনেকগুলো অভিযান করা এ পর্যন্ত, কিন্তু তুষার ধস তার কনফিডেন্সে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে ও আর অভিযানটাই করেনি। এই মাউন্টেন সবাইকে ট্রেইন করে নেয়। আমি খুব ভাগ্যবান যে অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি। আমি আসার পরে ব্রুনো (অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রুনো লাক্রামপ) আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার ফিঙ্গার টিপস ঠিক আছে কি না। কারণ প্রথম যারা আরোহণ করেছিল মরিস হেরজগ আর লুইস লেচেনাল, তাদের মধ্যে হেরজগ তার হাত-পায়ের আঙ্গুলের ডগা হারিয়েছিল।

প্রশ্নের জবাবে বাবর আলী বলেন, চ্যালেঞ্জের দিক থেকে অন্নপূর্ণা ১০ এ ১০, এভারেস্ট ১০ এ ২ এবং লোৎসে ১০ এ ৪ বলে মনে করি। এভারেস্টে অনেক ক্লাইম্ব হয়। অন্নপূর্ণায় শুধু সিজনড ক্লাইম্বাররা যায়। তিনটি আট হাজার মিটার উচ্চতার পর্বতে সফল অভিযানের পর নিজের স্বপ্ন হিসেবে এ উচ্চতার আরও ১১টি পর্বতের চূড়ায় উঠতে চান তিনি। তিনি জয় করেছেন এভারেস্ট, লোৎসে ও অন্নপূর্ণা। তার পরবর্তী গন্তব্য নেপালের মানাসলু, যেটা অষ্টম সর্বোচ্চ। আট হাজারি ১৪টির মধ্যে সাতটি নেপাল, দুটি তিব্বত এবং পাঁচটি পাকিস্তান থেকে সামিট করা হয়। সবই গ্রেটার হিমালয়ের অংশ।

অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রুনো লাক্রামপ বলেন, আমরা আশাবাদী যে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শীঘ্রই বাবর আলী বাকি সবকটি আট হাজার মিটার শৃঙ্গেই হাসিমুখে দাঁড়াতে পারবে। এই কীর্তি কিন্তু নেপালের শেরপারা বাদে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শুধু একজন পাকিস্তানির আছে, তিনি হলেন শিরবাজ খান। আর সবগুলো আট হাজার মিটার পর্বত সামিটের কীর্তি আছে সমগ্র বিশ্বে মাত্র ৭১ জন পর্বতারোহীর।

উল্লেখ্য, বাবরের এই অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার্স লি., ভিজ্যুয়াল ইকো স্টাইলওয়্যার লি., এডিএফ এগ্রো, ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এবং ব্লুজে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page