মঙ্গলবার- ২৯ জুলাই, ২০২৫

দুই ঘন্টার দু‘দফা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম যেন বহমান খাল

দুর্ভোগে জনক্ষোভ

দুই ঘন্টার দু‘দফা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম যেন বহমান খাল

নিম্নচাপের প্রভাব ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে কয়েকদিন ধরে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টিপাতে নগরীর নালা ও সড়ক ডুবে বহমান খালে পরিণত হয়েছে। ডুবেছে দোকান পাট ও উচু ভবনের নিচ তলাও।

সকাল ৯টায় শুরু হওয়া অঝোর ধারার বৃষ্টি থামে ১১টায়। এ সময় নগরীর মেহেদীবাগ, জিইসির মোড়, চকবাজার, মুরাদপুর, বাদুরতলা, বড়গ্যারেজ, সিরাজদৌল্লাহ রোড, দুই নম্বর গেট, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, কাতালগঞ্জ, নয়াবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, তিনপুল, জামাল খান, প্রবর্তক মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক ডুবে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

আবার দুপুর ১টা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ঝরে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। তাও ভারী থেকে নেমে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সাথে সাগরের প্রবল জোয়ার কর্ণফুলী নদী উপচে উঠে নগরীর খাল ও নালা দিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে সড়ক। কোন কোন এলাকার সড়কে জমে গেছে হাটু থেকে কোমর সমান পানি। পানি ঢুকে পড়েছে নগরীর ঐতিহ্যবাহী রেয়াজুদ্দিন বাজারের শত শত দোকানপাটেও।

রেয়াজুদ্দিন বাজারের এস আলম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি দোকানের মালিককে অসহায়ভাবে দোকানের ভেতর থেকে পানি সেঁচে মালামাল বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এছাড়া নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় হাটহাজারী সড়কে হাঁটুপানি ঠেলে যানবাহনগুলোকে কচ্ছপ গতিতে চলতে দেখা যায়। এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।

তবে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ অফিসগামী কর্মজীবী মানুষেরা। তাদের মতে, বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল কমে যায়। এ সুযোগে রিকশা ও সিএনজি চালকেরা দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনেকেই গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই রওনা দেন। আবার অনেকে মাঝপথে গাড়ি পেয়ে দেরিতে পৌঁছান পরীক্ষা কেন্দ্রে। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে গাড়ি ভাড়ায় বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে।

চট্টগ্রাম কলেজ এলাকার এক অভিভাবক বলেন, মেয়েকে নিয়ে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে সিএনজিতে চড়েছি। সিএনজিচালক স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে ৮০ টাকা ভাড়ায় গেলেও বৃষ্টির অজুহাতে ৩০০ টাকা নিয়েছে। বাধ্য হয়ে দিয়েছি।

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, পরীক্ষা দিতে বের হয়েছি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। রাস্তায় নামতেই দেখি পানি থই থই করছে। রিকশা পাচ্ছি না, আর পেলেও দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে।

সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা তাওসিফ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাতা নিয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ি থেকে নামতেই এত বৃষ্টি পেলাম যে পুরো কাপড় ভিজে একাকার। এই ভারি বৃষ্টি তো ছাতা মানছে না! এই ভেজা পোশাকেই পরীক্ষা দিয়েছি।

এদিকে সকাল থেকেই জলাবদ্ধতার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে হতাশা, আবার কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শরীফ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, চট্টগ্রামের সিরাজ-উদ-দৌলা রোডে সাবেরিয়া এলাকায় রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি। দীর্ঘ ২ কিলোমিটার যানজট। যারা বেসরকারি জব করেন, পানিসহ ছবি তোলেন। নতুবা লেট অ্যাটেনডেন্সের জন্য একদিনের স্যালারি কেটে রাখবে!

পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা কামরুন নাহার বলেন, মেহেদীবাগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাঁটু পানি জমে আছে। ধীরে ধীরে পানি আরও বাড়ছে, ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। তাওরাত লিখেছেন, কয়েকদিন আগে শুনলাম চট্টগ্রামে নাকি পানি জমছে না। এখন আবার সেই অবস্থা? মেয়র সাহেব তো কদিন আগে খুব দায়িত্ব পালন করলেন, তারপরও এই দৃশ্য!

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার আছে। আগের তুলনায় এখন জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পানি নামতে সময় লাগছে। বৃষ্টি থেমে গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় পানি নেমে যাবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) এক প্রকৌশলী বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে ১৪ হাজার ৩৯ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কাজ শেষ হলে স্থায়ী সমাধান আসবে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাহমুদুল হক বলেন, নিম্নচাপ কেটে গেলেও এর প্রভাবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ায় বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝারি থেকে ভারী আকারের এ বৃষ্টি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অতি ভারী বর্ষণে রূপ নিতে পারে। এ জন্য পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় (সকাল ৬টা পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই সময়ে রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরবর্তী ১২০ ঘণ্টায় চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

ঈশান/মম/খম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page