মঙ্গলবার- ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মেঘনা পেট্রোলিয়ামে নিয়োগে অর্থ হাতিয়ে এলপিআরে এমডি!

বহাল তবিয়তে জিএম ইনাম ইলাহী

মেঘনা পেট্রোলিয়ামে নিয়োগে অর্থ হাতিয়ে এলপিআরে এমডি!

মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে নিয়োগ-বাণিজ্যে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে এলপিআরে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. টিপু সুলতান। বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন নিয়োগ বাণিজ্যের মূল কারিগর জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) ইনাম ইলাহী চৌধুরী।

নিয়োগে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠার পর নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে এমডি মো. টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নোটিশ জারী করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। আর নোটিশ জারীর দিনেই গত ২৭ জুলাই এলপিআরে চলে যান টিপু সুলতান।

অন্যদিকে এই নিয়োগ বাণিজ্যের মূল কারিগর ইনাম ইলাহী চৌধুরীর বিষয়ে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ নেই নেটিশে। ফলে এই নোটিশকে নাটকপত্র বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিপিসি, ইস্টার্ণ রিফাইনারী, পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল মিলে দূর্নীতির এক মহাদুষ্টচক্র। যারা রাষ্ট্রকে গিলে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কয়েকটি পত্রিকায় ১২ পদে ১৪৭ জন লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। নিয়োগের আবেদনের মেয়াদ ছিল ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর চলতি মাসের ৪ জুলাই বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।

পদগুলোর মধ্যে রয়েছে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট, অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম টাইপিস্ট, টেলিফোন অপারেটর কাম রিসেপশনিস্ট, ক¤পাউন্ডার/ফার্মাসিস্ট, পা¤প অপারেটর, ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভার, অদক্ষ শ্রমিক/হেলপার, পিয়ন, ক্লিনার, সিকিউরিটি গার্ড, ফায়ার ফাইটার। পরীক্ষার ছয় দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষা না দিয়েই কেউ কেউ নিয়োগ পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

৪ জুলাই নিয়োগ-পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক চাকরিপ্রার্থী এ অভিযোগ তুলেছেন। তাদেরই একজন ছিলেন মো. জিহাদ। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, লিখিত পরীক্ষায় প্রতি টেবিলে চারজন করে পরীক্ষার্থী বসার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু যে টেবিলে আমি পরীক্ষা দিয়েছি সেখানে আমিসহ দু‘জন ছিলাম। বাকি দু‘জন ছিলেন অনুপস্থিত। কিন্তু পরীক্ষার ফল দেখে অবাক হয়েছি। কারণ অনুপস্থিত থাকা দুই ব্যক্তিই চাকরির জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন।

আরও পড়ুন :  কমিশন-স্ক্র্যাপ সব খান তবুও সাধু রেল কর্মকর্তা সাজ্জাদ

প্রমাণের জন্য ওই দিনের পরীক্ষাকেন্দ্রের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) ফুটেজ যাচাই করার পরামর্শ দেন জিহাদ। একই সাথে ওই দুই পরীক্ষার্থীর খাতা প্রদর্শণের দাবি করেন। একই অভিযোগ তুলেছেন সাজু ধর ও মাসুদ নামে আরও দুই চাকরিপ্রার্থী।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ১২ পদে ১৪৭ জন নিয়োগে মাথাপিছু ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা করে হাতিয়েছেন এমডি মো. টিপু সুলতান ও জিএম ইনাম এলাহী চৌধুরী। এই অর্থ হাতানোয় সহযোগীতা করেছেন শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) প্রভাবশালী নেতারা। যাদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে অস্থায়ীভাবে কর্মরত শ্রমিক। যারা এই নিয়োগ তাদের মধ্য থেকে দেওয়ার দাবি তুলে আন্দোলন করেছিলেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা এ নিয়োগ বন্ধে হাইকোর্টে পিটিশনও করেছেন। পরবর্তীতে গোপন চুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি ম্যানেজ করে এমডি টিপু সুলতান ও ইনাম ইলাহী সংশ্লিষ্টরা। যার প্রতিফলন এই নিয়োগ বাণিজ্য।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার পাশাপাশি খোদ মেঘনা পেট্রোলিয়ামের অফিসেই আলোচনার ঝড় বইছে। এ নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ২৮ জুলাই সোমবার পরীক্ষা বাতিল ও সাবেক এমডি টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বিপিসির দুইটি নোটিশ সামনে আসে। এর মধ্যে একটি নোটিশ বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা স্বাক্ষরিত পরীক্ষা বাতিল সংক্রান্ত।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রাম বন্দরের ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ না করলে মুখোশ খুলে দেব

এ নোটিশে বলা হয়, গত ৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এর কর্মচারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বাতিলপূর্বক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন প্রণীত বিদ্যমান নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নতুনভাবে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ স¤পদ বিভাগ কর্তৃক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় জ্বালানি ও খনিজ স¤পদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এর কর্মচারী নিয়োগের গত ৪ জুলাই ২০২৫ তারিখের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বাতিলপূর্বক পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে নতুনভাবে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

অপর নোটিশে বলা হয়, গত ৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এর কর্মচারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বাতিলপূর্বক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন প্রণীত বিদ্যমান নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নতুনভাবে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ স¤পদ বিভাগ কর্তৃক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া বিদ্যমান নিয়োগ নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিখিত পরীক্ষা স¤পন্ন করায় মো. টিপু সুলতান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিপিসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুটি নোটিশই জারি হয় ২৭ জুলাই। আর ওই দিনই এলপিআরে চলে যান এমডি টিপু সুলতান।

তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শাহীরুল হাসান। তিনি এর আগে পতেঙ্গায় ইস্টার্ণ রিফাইনারীতে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে নেটিশে নিয়োগ বাণিজ্যে অর্থ হাতানোর মুল কারিগর জিএম ইনাম এলাহী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন নির্দেশনা নেই।

আরও পড়ুন :  কমিশন-স্ক্র্যাপ সব খান তবুও সাধু রেল কর্মকর্তা সাজ্জাদ

বিষয়টি স্বীকার করে বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। সে সাথে প্রতিষ্ঠানটির এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. টিপু সুলতানের মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) ইনাম ইলাহী চৌধুরীও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করেন।

তিনি বলেন, এমডি এলপিআরে চলে গেছেন। তিনি ঢাকায় আছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে কমিটির আহ্বায়ক কে এবং কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু লিখিত কোন নির্দেশনা এখনও পায়নি। নিদের্শনা পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন করে পরীক্ষা হলে সবকিছু নতুন করেই হবে বলে জানান তিনি।

নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মিথ্যা, অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তদন্ত কমিটিও প্রমাণ করতে পারবে না। আপনাদের কাছে কোন তথ্য প্রমাণ থাকলে তদন্ত কমিটির কাছে দেন, তারা সত্য বের করুক।

ঈশান/খম/সুম

(বি : দ্র: শীঘ্রই আসছে এমডি টিপু সুলতান ও ইনাম ইলাহী চৌধুরীর দূর্নীতির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন। প্রিয় পাঠক চোখ রাখুন দৈনিক ঈশানে) 

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page