
আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন মত। এর মধ্যে তীব্র জনবল সংকটে ধুঁকছে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। এতে হযবরল নির্বাচন প্রস্তুতি কার্যক্রম। এ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের লোকবল সংকট আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে ১৪৫টি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যপদ পূরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশা করি, সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে জনবল আছে, তা দিয়েই আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এতে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি হযবরল অবস্থায় রয়েছে। নির্বাচনকালে জনবল সংকট থাকলে সুষ্ঠ নির্বাচন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে- এটা স্বাভাবিক।
নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে ১৭টি পদে মোট ৩০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫৭ জন। ফলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বিদ্যমান জনবলকে।
পদ অনুযায়ী ঘাটতির চিত্র আরও ¯পষ্ট- পাঁচ জন অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসারের বিপরীতে একজনও নেই, পাঁচ জন নির্বাচন অফিসারের বিপরীতে রয়েছে তিন জন। উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তার ৫৬টি পদের বিপরীতে আছেন ৩৭ জন, সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ৫৬ জনের বিপরীতে ২৫ জন।
এছাড়া সাঁটলিপিকার কাম ক¤িপউটার মুদ্রাক্ষরিক তিন জনের বিপরীতে আছেন মাত্র এক জন, উচ্চমান সহকারী ছয় জনের বিপরীতে তিন জন, হিসাব সহকারী পাঁচ জনের বিপরীতে চার জন, স্টোর কিপার পাঁচ জনের বিপরীতে তিন জন, অফিস সহকারী কাম ক¤িপউটার মুদ্রাক্ষরিক ৬৭ জনের বিপরীতে ২২ জন, গাড়ি চালক তিন জনের বিপরীতে দুই জন, অফিস সহায়ক ৭১ জনের বিপরীতে ৪৩ জন, নিরাপত্তা প্রহরী পাঁচ জনের বিপরীতে এক জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছয় জনের বিপরীতে পাঁচ জন এবং দপ্তরি পদের বিপরীতে কেউ নেই।
তবে আগামী নির্বাচনের আগে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে লোকবল কম থাকায় উপজেলা পর্যায়ে সেবাপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রামে চলছে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন ও প্রস্তুতির কাজ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ভোটগ্রহণের উপযোগী কিনা তা যাচাই-বাছাই চলছে।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, আগে যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবারও সেখানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেগুলোর সক্ষমতা কেমন, তা আমরা পরিদর্শন করছি। সেগুলো পরিদর্শন শেষ হলে কমিশনে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী প্রস্তুতির কাজ করা যাবে।
তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া। সে লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। লক্ষ্য পূরণে শূন্যপদে লোকবল নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।