বুধবার- ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পাহাড় কাটতে ৪০ লাখ টাকার চুক্তি

পাহাড় কাটতে ৪০ লাখ টাকার চুক্তি

# সহযোগীতায় পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা
# নাজেহাল পরিবেশ অধিদপ্তরের ভিজিলেন্স টিম
# বিক্রি হচ্ছে কাঠা প্রতি ১০ লাখ টাকায়

ট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানাধীন শাপলা ছড়া পাড় এলাকায় প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন পাহাড়। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ৪০ লাখ টাকার চুক্তিতে এই পাহাড় কাটছেন। চক্রটির সঙ্গে আকবরশাহ থানার উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্লট তৈরি করে বিক্রির উদ্দেশ্যেই মূলত পাহাড় কাটা হচ্ছে। খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গেলে পাহাড় কাটা চক্র তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ সময় তাদের আচরণ ছিল মারমুখী।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা। তিনি জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের ভিজিলেন্স টিমের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখানে কর্মকর্তারা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। পাহাড় কাটা চক্রের আচরণ ছিল মারমুখী।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার প্রমাণ মিলেছে। যথাযথ কারণ দর্শাতে চক্রটিকে নোটিশ করা হয়েছে। সঠিক জবাব দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন :  গুলশানে ফ্ল্যাট দখলে গিয়াস কাদেরের দুই ছেলে

সূত্র মতে, আকবরশাহ থানাধীন শাপলা ছড়া পাড় এলাকায় পাহাড় কাটার মূল হোতা হচ্ছেন বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর রোকন। তার হয়ে কাজ করছেন ইলিয়াছ। ইলিয়াছ নিয়োগ দিয়েছেন মো. খোকন প্রকাশ ডিস খোকন ও মো. ইব্রাহিম প্রকাশ ইব্রাহিম ভান্ডারীকে।

খোকন নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিলেও তার কোনো পদ নেই। ইব্রাহিম নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করলেও তিনি ৫ আগস্টের আগে ছিলেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ট কর্মী। এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলতে চাইলেও তারা যোগাযোগ করতে অস্বীকার করেন। এমনকি তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ করেননি তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকমাস ধরে পাহাড় কেটে ৩০-৩২টির মতো কাঁচা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ওই এলাকায়। কয়েকটি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে মানুষ। আবার কিছু ঘর খালি। ঘরগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন পাহাড়ঘেরা আছে। এই আড়ালেই প্রতিরাতে পাহাড় কাটা হয়। কাটা মাটি সরিয়ে নিয়ে ফেলা হচ্ছে নগরীর বিভিন্্ন নিচু এলাকায়।

আরও পড়ুন :  নথির ভারে নুইয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস

পাহাড় কাটা ঘিরে এলাকায় প্রায় ২০-২৫ জন দূর্বৃত্ত সশস্ত্র পাহারায় থাকে সবসময়। অচেনা কেউ পাহাড়ের পাশে গেলে তাদের থামানো হয়, নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়। এমনকি পাহাড়ের পাশে না যাওয়ার জন্য নানারকম ভয়ভীতি ও খারাপ আচরণ করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, চারটি পাহাড় কেটে সমতল করার পরিকল্পনা রয়েছে চক্রটির। যা করতে ৪০ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়েছে। চক্রটির সাথে পাহাড় কাটায় আকবর শাহ থানার উর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছে। যার ফলে পরিবেশ অধিদপ্তর, সাংবাদিক কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না তারা।

তাদের লক্ষ্য পাহাড় কেটে জমি প্লট আকারে বিক্রি করা হবে। প্রতি কাঠা আট থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়। জমির মালিক সরকার হলেও এভাবে বারবার হাতবদল হয়। একসময় সেখানে পাকা দালানও গড়ে ওঠে। স্থানীয়দের ভাষায়, এভাবেই পাহাড় কেটে বসতি তৈরি হয়।

আরও পড়ুন :  ইয়াবা পাচার নেটওয়ার্কের মূলহোতা কালাম গ্রেপ্তার

আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর যখন সহযোগিতা চায় আমরা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করি। তবে পাহাড় কাটা ভিজিটে তারা কখন গেছে আমরা জানি না। তাই সেখানে তাদের সাথে কি হয়েছে সে বিষয়ে আমরা অবগত নই।

থানার কর্মকর্তাদের যোগসাজশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ কেন পাহাড় কাটায় সহযোগিতা করবে? পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশ ছিল- পাহাড়ের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। মালিক সরকারি হোক বা বেসরকারি। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি মামলা করে তাহলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।

পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, প্রভাবশালীদের লোভের শিকার হয়ে চট্টগামে একে একে পাহাড় যেমন নিশ্চিহ্ন হচ্ছে তেমনি ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। পরিবেশ ভারসাম্য ঠিক রাখতে চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় আমরা বহু বছর আগ থেকে বলে আসছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! পাহাড় রক্ষায় সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত না জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবেন ততক্ষণ পাহাড় কাটা বন্ধ হবে না।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন