
ঘষামাজা করে দুটি ২ মুছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪০ কোটি টাকা পৌরকর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তা ও হিসাব সহকারীরা মিলে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এছাক ব্রাদার্সের দুটি প্রতিষ্ঠানের কর আদায়ে এই জালিয়াতি করেছেন।
অভিযানে যার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহ¯পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে দুদকের টিম চট্টগ্রাম মহানগরীর টাইগারপাসের চসিক কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় দুদক কর্মকর্তারা নথি পর্যালোচনা ও চসিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের পৌরকর নির্ধারণের বার্ষিক মূল্যায়নে এছাক ব্রাদার্সের হোল্ডিংয়ের বিপরীতে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার স্থলে আপিল রিভিউ বোর্ডে উপস্থাপনের সময় ২০ কোটি টাকা কম দেখানো হয়।
অপরদিকে এছাক ব্রাদার্সের ইনকনট্রেন্ড ডিপোতে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকার পৌরকর আপিল রিভিউ বোর্ডে দেখানো হয় ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। উভয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২৬ ও ২৫ কোটির এর দুই মুছে দেওয়া হয়। এতে কম যায় ২০ কোটি টাকা করে ৪০ কোটি টাকা।
দুদকের সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখেছি নথিতে ঘষামাজা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মালিকেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। যেহেতু তারা বেনিফিশিয়ারি। সিগনেচার এক্সপার্টদের মতামত নেওয়া হবে। বিস্তারিত তদন্তে ব্যাংকিং হিসাব তদন্ত করা হবে।
চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, ২০১৭-১৮ সালে চসিকের শেষ অ্যাসেসমেন্টকে ভিত্তি করে দুই কনটেইনার ডিপোতে অনিয়মটা হয়েছে। ২৬ কোটি এবং ২৫ কোটিকে ঘষামাজা করে ৬ কোটি ও ৫ কোটি দেখানো হয়েছে। একজন টিও এবং দুইজন ডিটিও সরাসরি এন কাজে জড়িত ছিলেন। হিসাব সহকারীরাও বিষয়টি জানতেন।
তারা হলেন কর কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম এবং উপ-কর কর্মকর্তা জয় প্রকাশ সেন। তারা ফিল্ডবুকের বিকৃত তথ্য যাচাই ছাড়াই আপিল বোর্ডে উপস্থাপন করেছেন। কর্মরত দুইজনকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হিসাব সহকারীদেরও ওএসডি করা হয়েছে। তাদেরও ১০ দিনের মধ্যে কারণদর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব দেওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থায় চলে যাব। একজন অবসর নিয়েছেন। অবসরোত্তর বেনিফিটগুলো স্থায়ীভাবে স্থগিত করেছি। ক্ষতি নির্ধারণের বিষয় ছিল।
এর আগে এই জালিয়াতি তদন্তে সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ২০ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর রাজস্ব সার্কেলের আওতাধীন দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর এলাকার এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি দিয়েছে ২০ কোটি টাকার করে ৪০ কোটি টাকা। ফলে সিটি কর্পোরেশন বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর মতো একটি বড় প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নে এমন জালিয়াতি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিরব থেকেছেন। হোল্ডিং মালিকপক্ষেরও এতে প্রত্যক্ষ যোগসাজশ ছিল।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন হিসাব সহকারী আহসান উল্লাহ, তিনি ফিল্ডবুক না দেখেই আপিল ফরমে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে তিনি এমন করেছেন।