সোমবার- ২০ অক্টোবর, ২০২৫

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামে ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি

টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রামে প্রাথমিকভাবে ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় মোট ৬ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৭৫৩ জনকে। ইতোমধ্যে জেলায় অতি বৃষ্টিতে দেয়াল ধসে ও পানিতে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে দু‘জন।

মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) বিকালে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা নিরূপণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। সোম ও মঙ্গলবার আমরা খাবার বরাদ্দ দিয়েছি। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে মোট ১ হাজার ১৯৩টি।

এর মধ্যে শনিবার গভীর রাতে বাঁশখালী উপজেলার বৈলগাঁও ২ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ বছর বয়সী মেজবাহ ঘরের দেয়াল ধসে মারা যায়। সোমবার হাটহাজারী উপজেলার ইসলামিয়া বাদামতল এলাকায় কলেজে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পানিতে পড়ে মারা যান হাটহাজারী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিপা পালিত।

আরও পড়ুন :  ওমান থেকে কফিন বন্দি হয়ে ফিরল আট প্রবাসী

একইদিন গভীর রাতে লোহাগাড়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পানিতে তালিয়ে গিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু হয়। মৃত জুনায়েদ ইসলাম জারিফ (২২) বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক¤িপউটার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এদিকে সোমবার বিকালে লোহাগাড়ায় বাড়ি ফেরার পথে স্রোতের টানে আহসাব মিয়া সওদাগর (৪৫) নামে এক ব্যক্তি তলিয়ে গেছেন। ওইদিন সন্ধ্যায় রাউজানে হালদা নদীর শাখা খালে নৌকা উল্টে সাহেদ হোসেন বাবু (৪০) নামে আরেক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বলেন, বৃহ¯পতিবার বিকাল থেকে চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার যোগ হলে শুক্রবার বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শনিবারও এসব এলাকা ছিল পানির নিচে। এ দিন থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় পানি বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন :  বাড়ি-গাড়ি, জাহাজ-লরি সবই আছে যমুনা অয়েলের গেজার জয়নালের!

রোববার বন্দর নগরীর নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যায়, পানির নিচে চলে যায় সীতাকুন্ড, মীরসরাই, পটিয়া, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার বেশ কিছু এলাকা। সোমবারও বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ছিল জলাবদ্ধ। সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী রোড এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি উঠতে শুরু করে।

গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে ৬৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে ভারি বর্ষণ না হলেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি আগস্ট মাসের গত সাত দিনে ৬৬৪ মিলিমিটার (মিমি) বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ আগস্ট ৪২ দশমিক ৮ মিমি, ৫ আগস্ট ৬৪ দশমিক ২ মিমি, ৬ আগস্ট ২৩১ দশমিক ৫ মিমি এবং ৭ আগস্ট ২১৬ দশমিক ৪ মিমি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে ১৯৪ পোশাক কারখানা ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে

এছাড়া আবহাওয়া অফিসের আমবাগন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ৪ আগস্ট ১২৫ মিলিমিটার, ৫ আগস্ট ৭৭ মিমি, ৬ আগস্ট ১৯৬ মিমি এবং ৭ আগস্ট ২০৮ মিমি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতি বৃষ্টির সাথে যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢল। পাহাড়ি নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরী এবং কর্ণফুলী ও হালদার পানি বেড়েছে প্রতিদিন।

চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা এবং উত্তরের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুন্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণ বেশি। এসব এলাকায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে।

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page