শনিবার- ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ঘুর্ণিঝড় মিধিলির আঘাত

চট্টগ্রামে আমন ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে চট্টগ্রামে পাকা আমন ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর আর্থিক হিসাবে চট্টগ্রামের কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে ৪২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমন ধান। সবজিতে ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে এ তথ্য জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে পাকা আমন ধান হেলে ঝরে পড়েছে। মাঠে পানি জমে আছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য কৃষকদের নালা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে ক্ষতি বেশি হয়েছে সবজিতে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সামনে বোরো ধান, হাইব্রিড এসব চাষাবাদে প্রণোদনাও দেওয়া হবে। আশা করছি এসব প্রণোদনা পেলে কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম জেলায় এবার মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৬৮ হেক্টর আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমির ধান বৈরি আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ৪৮২ জন কৃষক। অপরদিকে চট্টগ্রামে ২১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। আর এতে কপাল পুড়েছে ১ হাজার ৪৮৪ জন কৃষকের।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আমন ধানে ২০ জন কৃষকের ১ লাখ ২৯ হাজার ও শীতকালীন সবজিতে ১২৫ জন কৃষকের ৯১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ফটিকছড়িতে আমন ধানে ৫০ জন কৃষকের ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও সবজিতে ৩৫৪ জন কৃষকের এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। হাটহাজারীতে আমন ধানে ১৫ জন কৃষকের ১ লাখ ২৬ হাজার ও সবজিতে ৬০ জন কৃষকের ২১ লাখ টাকা, রাউজানে ৮২ জন কৃষকের আমন ধানে ১২ লাখ ও সবজিতে ২৮২ জন কৃষকের সাড়ে ৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

পাশাপাশি বোয়ালখালী উপজেলায় ১২ জন কৃষকের আমন ধানে ১ লাখ ২৬ হাজার ও সবজিতে ৮৮ জন কৃষকের সাড়ে ৪৫ লাখ টাকা, পটিয়ায় আমন ধানে ১৭ জন কৃষকের ১ লাখ ২৯ হাজার ও সবজিতে ১০ জন কৃষকের সাড়ে ৩ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।

অপরদিকে কর্ণফুলীতে আমন ধানে ৫০ জন কৃষকের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও সবজিতে ৮০ জন কৃষকের ৩৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আনোয়ারায় আমন ধানে ৬৫ জন কৃষকের ৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা ও সবজিতে ৯০ জন কৃষকের ৫৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। চন্দনাইশে আমন ধানে ১৮ জন কৃষকের এক লাখ ২০ হাজার টাকা ও ৫০ জন কৃষকের সবজিতে ২৮ লাখ টাকা, লোহাগাড়ায় ১৫ জন কৃষকের আমন ধানে এক লাখ ২৬ হাজার টাকা ও সবজিতে ৩৫ জন কৃষকের ১৪ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

তাছাড়া সাতকানিয়ায় আমন ধানে ২০ লাখ কৃষকের এক লাখ ২৩ হাজার টাকা ও সবজিতে ১০ জন কৃষকের সাড়ে ৩ লাখ টাকা, বাঁশখালীতে আমন ধানে ১৮ জন কৃষকের এক লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং সন্দ্বীপে ৭৫ জন কৃষকের আমন ধানে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও শীতকালীন সবজিতে ১৭০ জন কৃষকের ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জমির হিসাবে মিরসরাই উপজেলার ১৯ হাজার ২৫৪ হেক্টরের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর, সীতকুন্ডে ৫ হাজার ৮৩৬ হেক্টরের মধ্যে ৪০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ২০ হাজার ২৫ হেক্টরের মধ্যে ৬০ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৮ হাজার ৬৭০ হেক্টরের মধ্যে ৮৫ হেক্টর, রাউজানে ১০ হাজার ৮১০ হেক্টরের মধ্যে ৫৪০ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ১৪ হাজার ৩৭০ হেক্টরের মধ্যে ৪০ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৪ হাজার ৪৭৫ হেক্টরের মধ্যে ৮৫ হেক্টর, পটিয়ায় ১০ হাজার ২৪৩ হেক্টরের মধ্যে ১০ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১ হাজার ৩৭৬ হেক্টরের মধ্যে ৮০ হেক্টর, আনোয়ারায় ৭ হাজার ৩৯৯ হেক্টরের মধ্যে ১২০ হেক্টর, চন্দনাইশে ৮ হাজার ২৪৫ হেক্টরের মধ্যে ৩০ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ১০ হাজার ৮৬৪ হেক্টরের মধ্যে ২২ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ১১ হাজার ৫৪ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১৫ হাজার ৮৫০ হেক্টরের মধ্যে ২৫০ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ১২ হাজার ৯৪২ হেক্টরের মধ্যে ৫৩০ হেক্টর জমিতে আবাদি করা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১ হাজার ৬৯ হেক্টরের মধ্যে ৫০ হেক্টর, সীতাকুন্ডে ৩ হাজার ২৭৬ হেক্টরের মধ্যে ৮০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩ হাজার ১৩২ হেক্টরের মধ্যে ৪৫০ হেক্টর, হাটহাজারীতে ২৭০ হেক্টরের মধ্যে ৬০ হেক্টর, রাউজানে ৭৫০ হেক্টরের মধ্যে ২৫০ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৭১৮ হেক্টরের মধ্যে ৬৫ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ১৯০ হেক্টরের মধ্যে ২৫ হেক্টর, পটিয়ায় ৬৯৮ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ২৩৩ হেক্টরের মধ্যে ৭০ হেক্টর, আনোয়ারায় ৬৫০ হেক্টরের মধ্যে ৪০ হেক্টর, চন্দনাইশে ১ হাজার ৩৯০ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ৮০০ হেক্টরের মধ্যে ৩ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ১ হাজার ৬৫ হেক্টরের মধ্যে ১ হেক্টর, বাঁশখালীতে ২ হাজার ৮৬০ হেক্টরের মধ্যে ২৮০ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ৩ হাজার ৫৪০ হেক্টরের মধ্যে ১ হাজার ৮১ হেক্টর জমিতে চাষ করা শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশে আমন ধানে ২৫ জন কৃষকের ১ লাখ ২৯ হাজার এবং শীতকালীন সবজিতে ১৫ জন কৃষকের সাড়ে ৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ডবলমুরিংয়ে শুধুমাত্র সবজিতে ১১৫ জন কৃষকের ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

জমির হিসাবে নগরীর পাঁচলাইশে ২৩০ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর ও ডবলমুরিংয়ে ২৫ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। শীতকালীন সবজির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশে ১৫০ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর, ডবলমুরিংয়ে ৫০ হেক্টরের মধ্যে ১৮ হেক্টর ও পতেঙ্গায় ২৩৪ হেক্টরের মধ্যে ১৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

ঈশান/সুম/সুপি

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page