মঙ্গলবার- ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

ট্রানজিট : আয়ের নতুন পথ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত সোমবার একটি স্থায়ী আদেশ জারি করেছে। এই স্থায়ী আদেশ জারির মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিট কার্যক্রম শুরুর পথ খুলেছে। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, এনবিআরের আদেশে ট্রানজিট অপারেটর নিয়োগ, বন্দরে জাহাজ ভেড়া, ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্টের ঘোষণা, শুল্কায়ন, পণ্যের কায়িক পরীক্ষা, ট্রানজিটকাল ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষামূলক চালানে মাশুলের (ফি) যেসব খাত ছিল, নতুন আদেশে তা বহাল রাখা হয়েছে।

তবে নতুন আদেশে সড়কপথে ট্রানজিটের চালান আনা-নেওয়ার সময় ‘এসকর্ট ফি’ (পাহারার মাশুল) বাড়ানো হয়েছে। আদেশটিতে ট্রানজিট অপারেটর হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত করা এবং সড়কপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি যানবাহন ব্যবহারের কথা রয়েছে।

ভারতের মূল ভূখ- থেকে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে (আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল ও মেঘালয়) পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বেশি লাগে। এ জন্য দেশটি চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের সড়ক দিয়ে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহন করতে চায়। ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য করার সুযোগও পেয়েছে।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, ভারতের পণ্য চালান চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আটটি রুটে (পথ) বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে স্থলবন্দর হয়ে ভারতে নেওয়া যাবে। আবার একইভাবে ওই আটটি রুটে ভারত থেকে বাংলাদেশের স্থলবন্দর হয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য চালান আবার ভারতে নেওয়া যাবে।

এনবিআরের স্থায়ী আদেশে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে মাশুল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী, প্রতি চালানের প্রক্রিয়াকরণ মাশুল বা প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা, নিরাপত্তা ফি ১০০ টাকা, কনটেইনার স্ক্যানিং (যন্ত্রের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা) ফি ২৫৪ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আদেশে প্রতি কনটেইনার বা গাড়ির জন্য কিলোমিটারপ্রতি এসকর্ট (পাহারা) ফি ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে প্রতি চালানে এসকর্ট ফি ছিল ৫০ টাকা। ইলেকট্রিক লক ও সিল ফি নামের আরেকটি খাত রয়েছে, যেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এনবিআরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনারে ইলেকট্রিক লক ও সিল ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার আগে এসকর্ট ফি আদায় করা হবে। ইলেকট্রিক সিল বাস্তবায়ন হলে তখন এসকর্ট ফি দিতে হবে না।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

এর বাইরে সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মাশুল দিতে হবে। ২০২১ সালের ১৬ জুন আটটি রুটে ওই মাশুল নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। প্রতি টন পণ্যে প্রতি কিলোমিটারে মাশুল ১ টাকা ৮৫ পয়সা। আটটি রুটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব মোংলা বন্দর-গোপালগঞ্জ-মাওয়া-ঢাকা-নরসিংদী-আশুগঞ্জ-সিলেট-তামাবিল রুটের। এই রুটে ৪৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য টোলসহ মাঝারি পণ্য পরিবহনক্ষমতার ট্রাকের আদায়যোগ্য মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ১৯৫ টাকা। সবচেয়ে কম দূরত্ব চট্টগ্রাম বন্দর-ফেনী-কুমিল্লা-বিবিরবাজার রুটের, ১৪৩ কিলোমিটার। এই রুটে সড়কপথের মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৮ টাকা।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

কনটেইনার ওঠানো-নামানো বাবদ মাশুল রয়েছে দুই বন্দরের। আবার ভারতীয় পণ্য আনা-নেওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত শিপিং এজেন্ট, ট্রানজিট অপারেটর এবং কনটেইনার পরিবহন বাবদ দেশীয় পরিবহন খাতেরও আয় হবে।

এনবিআরের নতুন আদেশের ফলে ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হলো। ট্রানজিট পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আয়ের পাশাপাশি লাভের বড় জায়গা হলো পরিবহন খাত। ভারত থেকে যাতে বাংলাদেশি জাহাজে পণ্য আনা যায়, সেই ব্যবসা ধরতে নজর দিতে হবে। বন্দরের সুযোগ-সুবিধা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ভালো সেবা দিতে পারলে সেবামাশুলও বাড়ানো যাবে। মোটকথা, এতে উভয় পক্ষ লাভবান হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ ও তৃতীয় দেশের পণ্য আনা-নেওয়ার যে সুযোগ রয়েছে, তা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটা ভাবা উচিত।

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page