শনিবার- ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু

একদিকে নির্মাণের উদ্যোগ, অন্যদিকে সংস্কারের নামে লুটপাট

একদিকে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ। অন্যদিকে সংস্কার। এভাবে হোলিখেলা চলছে চট্টগ্রামের শত বছরের পূরনো জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু নিয়ে। যার আগা-গোড়াই লুটপাটের মহা আয়োজন বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

সম্প্রতি এই সেতু সংস্কারের জন্য ৫০-৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়ার তথ্য পেয়ে এমন মন্তব্য করেছেন সুজন চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০১০ সালে কক্সবাজারের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের জন্য হাতে নেওয়া প্রকল্পটিতে কেন কালুরঘাট সেতুর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি? তখন বিষয়টি প্রকল্পে আনলে বাড়তি এই ব্যয় হতো না। পাশাপাশি নতুন সেতুও হতো, ঠিক সময়ে কক্সবাজার লাইনে ট্রেনও চলত। এটি মূলত তারা ইচ্ছা করেই করে। নতুন কিছু মানেই তো লুটপাট।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্যমতে, চলতি বছর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু করতে চায় রেলওয়ে। এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় কালুরঘাট সেতু। কারণ, এই সেতু দিয়ে বর্তমানে যেসব ট্রেন যায়, সেগুলো ১১ দশমিক ৯৬ টন এক্সেল লোডবিশিষ্ট অর্থাৎ ছোট লোকোমোটিভ বা হালকা ওজনের কোচের।

কিন্তু কক্সবাজারে যেসব ট্রেন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেসব ট্রেনের ইঞ্জিন ১৫ এক্সেল লোডের। তাই গত বছর বুয়েটের কাছে ২৫ এক্সেল লোডের ট্রেন চালানোর উপযোগী নকশা চেয়েছিল রেলওয়ে। আর এ জন্যই তড়িঘড়ি করে পুরোনো সেতুটিকে চলার উপযোগী করা হচ্ছে।আর এই সংস্কারে ৫০-৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুর ওপর এই অর্থ ব্যয় পুরোটা অপচয় হবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম। তিনি বলেন, সংস্কার করে সেতুটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হলেও এটি সর্বোচ্চ এক বছর চলবে এবং তা-ও হবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁর নেতৃত্বে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার নিয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাইমূলক গবেষণা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, সংস্কার করেও এই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে না।

২০২১ সালের অক্টোবরে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের পর্যবেক্ষক দল সেতু পরিদর্শন করে জানালিহাট অংশে আবৃত প্রাচীর এবং সুরক্ষা দেয়ালে ফাটল খুঁজে পায়। এ ছাড়া আরও বড় ধরনের ছয়টি ত্রুটি চিহ্নিত করে। এসবের একটি হলো সেতুর ১ ও ১৫ নম্বর পিলার। জাহাজ চলাচলের সময় সংঘর্ষ হলে পিলারগুলো ভেঙে যেতে পারে।

সেতুর গার্ডার, ডেক, অ্যাঙ্গেল, গ্যাসেট প্লেট, রিভেট ও অন্যান্য অংশ ক্ষয়ে গেছে। তাই সেতুটির ভার বহনের ক্ষমতা দিন দিন কমছে। সেতুর ওপরের অংশের অ্যাপ্রোচ লাইনচ্যুত হওয়ার লক্ষণ দেখতে পান পর্যবেক্ষকেরা।

তখন বুয়েটের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেতুতে গার্ডারের ভার বহনকারী ইস্পাতগুলো অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতুর দুই পাশের কাঠের পাটাতন ও লোহার বেষ্টনী ঠিকঠাকমতো আছে কি না, তা পরীক্ষা করা দরকার। কারণ, এসব যন্ত্রাংশের কাঠামো বেহাল। তবে সেতুর ফাউন্ডেশনে কোনো ত্রুটি পায়নি পর্যবেক্ষক দল।

কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, এ কাজের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে বুয়েটের পরামর্শক দল দুই ধাপে দুটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেতু কীভাবে সংস্কার করতে হবে, সেটির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। পাশাপাশি একটি নকশাও এঁকে দিয়েছে তারা। আরও একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বুয়েট তিনটি রিপোর্টের মধ্যে দুটি দিয়েছে। বাকিটা হয়তো আগামী মাসের মধ্যে পেয়ে যাব। তারপর দ্রুতগতিতে সংস্কার করে চলতি বছরের মধ্যে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানো যাবে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page