বৃহস্পতিবার- ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণে ফারুক-নজরুল!

print news

ট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানার ৩৮নং ওয়ার্ডের মাইজপাড়া এলাকার শেখ আহমদ সওদাগর বাড়ির পাশে শতবর্ষী বিশাল একটি পুকুর ভরাট করে ভবনসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করছে ফারুক-নজরুল সিন্ডিকেট। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুকুরটি এলাকার শত শত পরিবারের হাজার হাজার মানুষ গোসলসহ সাংসারিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার করতেন। এমনকি অগ্নিকান্ডসহ নানা দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত হত শতবর্ষী এই পুকুরের পানি।

কিন্তু মৃত আলী হোসেনের পূত্র মো. নজরুল (৩৮) ও তার জেঠাতো ভাই মো, ফারুক (৩৬) সিন্ডিকেট ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে পুকুরটি সেঁচে গলাটিপে হত্যা করেছে। পুকুরটির একাংশ ভরাট করে ফারুক ইতোমধ্যে ভবন নির্মাণ করে ফেলেছে। বর্তমানে আরও ভবন সম্প্রসারণ করছে। নজরুল ভবন তৈরির জন্য গাছ ও লোহার বেষ্টনি দিয়ে পুকুর ভরাট কাজ চালাচ্ছে।

এতে গোসলসহ সাংসারিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নানা প্রতিকুল পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ। ব্যাপক প্রভাব পড়েছে পরিবেশের উপরও। এতে বেড়ে গেছে এলাকার বাযু দুূষণ ও অসুখ-বিসুখ। এছাড়া অগ্নিদূর্ঘটনা ও সামাজিক প্রয়োজন মেটানো নিয়েও ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

পুকুরটি রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। এ বিষয়ে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে জানানো হয়।

এলাকাবাসীরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানা এলাকার মধ্যম হালিশহর মৌজার আরএস ৫০৪২ দাগের ৫৫ শতক জমি জুড়ে পুকুরটি জারি ছিল প্রায় শত বছর আগে থেকে। যা পিএস ১০৪৪৩, ১০৪৪৪, বিএস ৫৬৩৪, ৫৬৩৫ এবং দিয়ারা জরিপে ২৯৮৮৪ দাগে ১৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, ২৯৮৮৫ দাগে ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ পুকুর হিসেবে জারি রয়েছে।

পুকুরটি শুরু থেকে এলাকার সামাজিক পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভুমিকা পালন করে আসছিল। পুকুর ঘিরে গড়ে উঠা শত শত পরিবারের হাজার হাজার মানুষের গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় জনজীবনে দারুণ ভুমিকা রেখে আসছিল। এমনকি অগ্নিদূর্ঘটনাসহ নানা ফসল উৎপাদনে সেচ কাজে ব্যাপক অবদান রেখে আসছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফারুক ও নজরুল সিন্ডিকেট ভবন নির্মাণ করার জন্য পুরো পুকুর পানি সেচে ভরাট করা শুরু করে। এর আগে পুকুরটির একাংশ ভরাট করে ফারুক ভবন নির্মাণ করলেও বর্তমানে আরও পুকুর ভরাট করে ভবন সম্প্রাসারণ কাজ চালাচ্ছে। নতুন নির্মিত ভবনের দেয়াল নির্মাণ শেষে তিনি ৫ জানুয়ারি রবিবার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করবেন বলে জানা গেছে। এই ভবন নির্মাণে সিডিএর কোন অনুমোদনও নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে নজরুল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে পুকুরের বাকি অংশ গাছ ও লোহার বেষ্টনি দিয়ে ভরাট কাজ চালাচ্ছে। ফলে পুকুরটির অস্তিত্ব বলতে এখন মাঝখানে কিছু অংশ বাকি আছে। যা ছোট কুয়ার মতো দৃশ্যমান হচ্ছে। সেখানে সামান্য পানি টলমল করছে। আকার-আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় এখন আর মনেই হচ্ছে না এটি পুকুর। বলতে গেলে শতবর্ষী বিশাল পুকুরটি গলাটিপে হত্যা করেছে ফারুক ও নজরুল সিন্ডিকেট।

স্থানীয়রা আরও জানান, এলাকার বাসিন্দা মৃত সুলতান আহমেদের পুত্র মো. মফিজুর রহমান, মৃত ইউসুফ, আব্দুল আজিজ, খাজা আহমদ, বাচ্চু মিয়া বিএস রেকডীয় ৬০ শতাংশ জায়গার মালিক হওয়া সত্ত্বেও দিয়ারা জরিপে তাদের নাম নাই। দিনমজুর হওয়ায় মামলা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জায়গা উদ্ধার করতে না পারার কারণে ফারুক-নজরুল সিন্ডিকেট জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করছে। পুকুরটি ভরাট করার কারণে এলাকায় বায়ু দূষণ বেড়েছে। বাতাসে ধুলিকণা উড়ে সাধারণ মানুষ নানা অসুখে-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে আগুনে জনবসতি পুড়ে ছাই হলেও পানি সংকটে আগুন নেভানো কষ্ঠসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হয় নজরুলের সাথে। কথার শুরুতেই তিনি বলেন, এখানে পুকুর দেখছেন কোথায়। এখানে তো পানিও নেই। আপনি এসে দেখে যান। এখানে কি কোন পুকুর ছিল না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছিল এখন নেই। মরা পুকুর ভরাট করে আমি স্থাপনা করছি।

পুকুর নেই কেন এবং নাই হয়ে গেল কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা বলতে পারবে আমার জেঠাতো ভাই ফারুক। সে আরও দশ বছর আগে পুকুর ভরাট করে ভবন তৈরি করেছে। বর্তমানে আরও পুকুর ভরাট করে ওই ভবনের সম্প্রসারণ কাজ করছে।

পরিবেশ আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নজরুল বলেন, ফারুক করেছে দোষ হয়নি। আমি করায় দোষ হচ্ছে। ফারুক করেছে আমিও করছি। এ বিষয়ে জানতে ফারুকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, পুকুর ভরাট নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেরও দায় আছে। তবে বেশি দায় পরিবেশ অধিদপ্তরের। পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলে আমি শীগগির কাজটি বন্ধ করার চেষ্টা করছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মুক্তাদির হাসান মুঠেফোনে বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এ বিষয়ে জিডি লিপিবদ্ধ করে আমরা শীগগির অভিযান পরিচালনা করব।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন