মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামে আগামি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ভারি বর্ষণের প্রভাবে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও করছেন আবহাওয়াবিদরা।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এ বৃষ্টির কারণে নগরীর চকবাজার, ষোলশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, শুলকবহর, হালিশহর, দুই নম্বর গেট, পশ্চিম বাকলিয়াসহ বেশ কিছু নিচু এলাকায় সড়কের ওপর পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। অলিগলিও পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অফিসগামী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শুলকবহর এলাকার বাসিন্দা আশরাফ উল্লাহ বলেন, আমাদের এখানে অলিগলিতে কোমর সমান পানি জমেছে। পাশে নালা আছে। মানুষ রিকশা নিয়ে ঝুঁকিতে চলাফেরা করছে। রিকশাচালক যদি ভুলে নালায় চাকা ফেলে তাহলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
হালিশহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়ও জমেছে কোমর সমান পানি। সেখানকার বাসিন্দা এরশাদুর রহমান জানান, অনেক বাসাবাড়ির নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। আর যারা সেমিপাকা ঘরে বাস করছেন, তাদের ঘরে পানি ঢুকে অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে ভারি বর্ষণে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সাতকানিয়ার বাসিন্দা আরিফ আফজালি জানান, উপজেলার, কাঞ্চনা, সোনাকানিয়া, বাজালিয়া, খাগরিয়া, কেঁওচিয়া ও ছদাহা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক ও রাস্তাঘাট পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ঢলের পানি পুকুর ও মাছের প্রোজেক্টে ঢুকে পড়ায় অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়াও নিচু এলাকার বেশিরভাগ সবজি ক্ষেত ও ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে হাঙর খালসহ বেশ কয়েকটি শাখা খালের পানি উপচে আমতলা সংলগ্ন বিল পরিপূর্ণ হয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কেরানিহাট-বান্দরবান মহাসড়ক দস্তিদার হাট এলাকায় তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের বাজালিয়া-শীলঘাটা সড়কের বৈতরণী দোয়ান্দা এলাকায় নির্মিত সেতুর একাংশ ধসে গেছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভারি বর্ষণে বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া ও সীতাকুন্ড উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। আগামি ৪৮ ঘণ্টায় আরও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে পাহাড় ধসের সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে আগামি পরশু থেকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হবে। এরপর ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাতও কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে সু¯পষ্ট লঘুচাপের প্রভাব কমে আসায় মৌসুমী বায়ু সক্রিয় আছে। এছাড়াও গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রভাবে উপকূলে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।