রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপি-ওয়াই) রক্ষিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা রেলের নতুন ইঞ্জিন থেকে যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর কারণে ইঞ্জিন তিনটি সিজিপি-ওয়াই থেকে গন্তব্যে নেওয়া যাচ্ছে না। চুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।
বৃৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর চট্টগ্রাম সদরের কমান্ড্যান্ট রেজোয়ানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত ২৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাঁচটি ইঞ্জিন ছাড়িয়ে আনার পর নিয়ম অনুযায়ী সিজিপি-ওয়াইতে রাখা হয়। সেখানে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাকর্মীরা এসব ইঞ্জিন পাহারা দিচ্ছিলেন। ইঞ্জিনগুলো প্যাকেটজাত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে তিনটির কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে।
যে কারণে সেগুলো পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহীতে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ওইসব যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আনার পর এসব ইঞ্জিন সচল করা সম্ভব হবে। তবে চুরির ঘটনা তদন্তে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, ইঞ্জিনগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ছিল। তারা সেগুলো আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। এরপরও ওই এলাকায় আরএনবির দায়িত্বে নিয়োজিতদের যেকোনও নাশকতা রোধে এসব পাহারা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে। এ চুরির পেছনে কার গাফিলতি ছিল তা তদন্ত করতে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আরএনবির চট্টগ্রাম রেল স্টেশন এলাকায় দায়িত্বরত চিফ ইন্সপেক্টর (সিআই) রেজওয়ানুর রহমানকে। তিনি বৃহ¯পতিবার বিকেলে বলেন, মৌখিকভাবে শুনেছি আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র এখনও হাতে পাইনি। হাতে পাওয়ার পর কাজ শুরু করবো। কেন কীভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তে তুলে আনার চেষ্টা করবো।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেলওয়ের জন্য ৪০টি ব্রডগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকমোটিভ ইঞ্জিন কেনার চুক্তি হয় অনেক আগে। এক হাজার ১২৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব ইঞ্জিন সরবরাহ করছে মার্কিন কো¤পানি প্রোগ্রেসিভ রেল ইউএসএ। চুক্তির আলোকে এখন পর্যন্ত ৩০টি ইঞ্জিন দেশে পৌঁছে। এর মধ্যে সর্বশেষ চালানে গত ২৭ জুন পাঁচটি ইঞ্জিন চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সিজিপি-ওয়াইতে পৌঁছে। সম্প্রতি সেগুলো পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে তিনটির যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে।
সিজিপি-ওয়াই ইয়ার্ডের কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, এসব ইঞ্জিনের নিরাপত্তায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীরাও দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপরও কীভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে তা বুঝা মুশকিল এবং বিস্ময়ের ব্যাপাার।
তিনি আরও বলেন, এই ইয়াড রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ড। চট্টগ্রাম থেকে সকল ধরণের পণ্য পরিবহন ঢাকাসহ সারাদেশে এই ইয়ার্ড থেকে হয়ে থাকে। এছাড়া এই ইয়ার্ডে সংরক্ষিত রয়েছে রেলের শত শত কোটি টাকার অব্যবহৃত যন্ত্রাংশ। ফলে এই ইয়ার্ডে আরএনবির অত্যন্ত শক্তিশালী নিরাপত্তা টিম দায়িত্বে রয়েছে। এরপরও প্রায় সময় এই ইয়ার্ড থেকে রেলের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে নতুন রেল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি জোরালোভাবে তদন্ত করা দরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নতুন রেল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ চুরি আমাদেকেও ভাবাচ্ছে। বিষয়টি আমরা জোরালোভাবে নিয়েছি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদেও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।