বৈরি আবহাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যাওয়া শতকোটি টাকার পণ্যের কনটেইনারবাহী জাহাজ এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস উদ্ধারে নিশ্চয়তা মিলছে না কোনভাবে। ঘটনার পর ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও জাহাজটি উদ্ধারে কোন অভিযান শুরু হয়নি এখনো।
এতে জাহাজে কনটেইনারবাহী শতকোটি টাকার পণ্য নষ্ট হওয়ার চরম আশঙ্কায় ভুগছেন আমদানিকারকরা। আমদানিকারকরা জানান, গত ৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের পাঁনগাও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালে যাওয়ার পথে বৈরি আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর ভাসানচরের কাছাকাছি সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যায় এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস।
এরপর থেকে জাহাজটি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছি আমরা। কিন্তু কেউ তাদের পণ্য উদ্ধারে যথাযথ আশ্বাস দিতে পারেননি। এছাড়া জাহাজটি কবে নাগাদ উদ্ধার করবে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টদের কেউ। এতে আমাদের শতকোটি টাকার পণ্য নষ্ট হওয়ার পথে।
জাহাজটিতে মোবাইল ফোনের সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী হালিমা গ্রুপের এক কনটেইনার মালামাল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, আমাদের পণ্যবাহী কনটেইনারটি জাহাজের ওপরের দিকে রয়েছে বলে ধারণা করছি। এটি যেহেতু ডুবেনি, সেহেতু দ্রুত উদ্ধার করা গেলে মালামাল অক্ষত পাওয়া যেত। তবে উদ্ধার প্রক্রিয়া এভাবে ধীরে হওয়ার কারণে মালামাল অক্ষত পাওয়া যাবে কি না সন্দিহান।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস ডুবে যাওয়ার পরও এতোদিন উদ্ধার না হওয়া দুঃখজনক। এর মধ্য দিয়ে জাহাজ উদ্ধারে আমাদের সীমাবদ্ধতা বুঝা যাচ্ছে।
জাহাজটি উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের মালিকানাধীন এই জাহাজটি সি গ্লোরি শিপিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান লিজ নিয়ে পরিচালনা করছে। এ অবস্থায় জাহাজটি দ্রুত উদ্ধারের জন্য সি গ্লোরি শিপিংকে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটা যারা লিজ নিয়েছে তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
কিন্তু জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সি গ্লোরির ব্যবস্থাপক মাইনুল হোসেন বলেন, আমাদের টিম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জাহাজটি উদ্ধারে আমাদের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে ওই এলাকার আশেপাশে সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যাঘাত ঘটছে। কবে নাগাদ এই জাহাজ উদ্ধার করা সম্ভব হবে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন এম ফরিদুল আলম বলেন, সাগর এখনো উত্তাল। ভাটার সময় জাহাজটির কিছু অংশ দেখা গেলেও জোয়ারের সময় পুরোপুরি ডুবে যাচ্ছে। এমনকি কাছে গিয়ে ডুবন্ত জাহাজের পাশাপাশি কনটেইনারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে সে অবস্থাও নেই। বিরূপ আবহাওয়ার পাশাপাশি সাগর উত্তাল থাকায় উদ্ধার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, সোমবার (১৭ জুলাই) সকাল পর্যন্ত সন্দ্বীপ চ্যানেলে ওই জাহাজটিকে কাত হয়ে ভাসতে দেখা যায়। জাহাজটিতে এখনো ৭২টি কন্টেইনার রয়েছে। ১১ দিন ধরে যুবে থাকায় এসব কন্টেইনারের পণ্য নষ্ট হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যাওয়া এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস জাহাজটিতে বিভিন্ন আমদানিকারকের ৭২ কনটেইনার (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক) মালামাল ছিল। দুর্ঘটনার দিনই তিনটি কনটেইনার ভেসে যায়। এরপর বেশিরভাগ কনটেইনার ডুবে গেছে।
যদিও প্রাথমিকভাবে জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পরপরই সংস্থাটি দুটি টাগবোট কান্ডারি-১১ ও কান্ডারি-১২ পাঠিয়েছিল। শক্তিশালী বোট দুটি দুর্ঘটনার কবলে পড়া কনটেইনারবাহী জাহাজটিকে উদ্ধার করতে পারেনি।
তবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। বর্তমানে জাহাজটি উদ্ধারে যেহেতু বন্দর কর্তৃপক্ষ তৎপরতা চালাচ্ছে, সেহেতু প্রতিষ্ঠানটি আপাতত চিন্তিত না। যদি কোনো কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করে সেক্ষেত্রে নোটিশ দিয়ে জাহাজটি স্ক্র্যাপ হিসেবে উদ্ধার করবে বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএর চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক সবুর খান বলেন, জাহাজ উদ্ধারের বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে। তারা ভাড়া দেওয়া প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়ে জাহাজটি উদ্ধার করছে বলে জেনেছি। তবে তারা এটি উদ্ধার করতে না পারলে সবশেষ নোটিশ দিয়ে স্ক্র্যাপ হিসেবে জাহাজটি বিআইডব্লিউটিএ উদ্ধার করবে।