চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার সার্কেলের কাস্টমস বন্ড কমিশনারের ড্রাইভার সৈয়দ নাছির উদ্দিন অঢেল স¤পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে তাকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে তার স¤পদের হিসেব কষে এই দপ্তরের অন্যন্যাদের কেমন স¤পদ হতে পারে তা নিয়ে গুজবের শেষ নেই।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিসের গাড়ী চালক সৈয়দ নাছির উদ্দিন ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বন্ড কমিশনারের ড্রাইভার পদে চাকুরিতে যোগ দেন। এরপর তার হাতে যেন চলে আসে আলাউদ্দিনের চেরাগ। মাত্র ৫ বছরের মাথায় বিপুল অর্থ ও স¤পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারের ড্রাইভার এ সুবাধে নগরীর বিভিন্ন বন্ড কারবারিদের থেকে বন্ড সুবিধা ও বন্ড ক্যাশিয়ার পরিচয়ে মাসে বিপুল টাকা আদায় করে থাকেন সৈয়দ নাছির উদ্দিন। এসব টাকা তিনি উপরিস্থ কর্মকর্তাদের নামেই তুলে থাকেন।
বিশেষ করে এশিয়ান গ্রুপ অব কো¤পানী, ফোর এইচ গ্রুপ, ফারজানা এ্যাপারেলস, শানে মদিনা, ইকবাল চেয়ারম্যান হাটহাজারি বন্ড কারবারি, দেওয়ানহাটে আয়ুব আলী বন্ডের কাপড় কালবাজারিসহ সৈয়দ নাছির উদ্দিন ক্যাশিয়ার পরিচয়ে মাসে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেন।
এসব প্রতিষ্ঠান ও চোরাকারবারীরা মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিলেও ব্যবসায়ের ক্ষতি হবে এই ভয়ে তারা মুখ খুলে না। এভাবে অল্প দিনের মাথায় নগদে ও স¤পদে বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে এই সৈয়দ নাছির উদ্দিন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার রামু এলাকায় নামে বেনামে বিপুল স¤পদ আছে সৈয়দ নাছির উদ্দিনের। স্ত্রীর নামে কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে বলে একটি সূত্র দাবী করছে। তার রয়েছে দুইটি বিলাসবহুল গাড়ি। যার নাম্বার চট্টমেট্টো চ-১১-২৭০৭ ও চট্টমেট্টো ঘ-১১-০৮২১। এই দুটি গাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকার ঊপরে।
দূদক থেকে বাঁচার জন্য উল্লেখিত গাড়ি দুইটির কাগজপত্র তার নামে না করে বেনামে আবেদন করে রাখে। বর্তমানে গাড়ি ২টি চট্টগ্রাম কাস্টমস শূল্ক গোয়েন্দাতে মাসিক ভাড়ায় লাগায়িত আছে বলে খবর মিলছে। চাকুরি পাওয়ার আগে সৈয়দ নাছির নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মাসুমের অনুসারী কর্মী ছিলেন। এ সময় তিনি ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ নাছির উদ্দিন বেশ গর্বের সাথে বলেন, হ্যাঁ আমি নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা মাসুম ভাইয়ের অনুসারী কর্মী। এক সময় রাস্তায় আমি চাঁদাবাজি করতাম। এক-একটি অস্থায়ী দোকান থেকে ৫০-১০০ টাকা চাঁদা তুলতাম। দিনে ৪-৫ হাজার টাকা আয় ছিল। এখন চাকরি করে মাসে মাত্র ২৪ হাজার এবং ওভারটাইম ১২-১৩ হাজার টাকা পাই।
তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে নগরীর অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাওয়া স্কুলে পড়ে। এখানে আমার প্রচুর টাকা খরচ আছে। পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাাকি। ড্রাইভারের চাকরি করেও আমার এই আয়ে পোষায় না। তাই এই চাকরি আমি ছেড়ে দিতে চাই।
প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বন্ড কমিশনারের সরকারি গাড়ি নেই। তাই জাফর আলী নামে এক সাংবাদিকের পরিচয়ে একজনের গাড়ি ভাড়ায় চালায়। ওই গাড়ির ড্রাইভার আমি। তবে বেনামে থাকা নিজের দুটি গাড়ির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
নিজের নামে ব্যাংক বেলেন্স ৮০০ টাকা থাকার কথা জানালেও স্ত্রীর নামে কোটি টাকার এফডিআর থাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি তিনি। বন্ড ক্যাশিয়ার হিসেবে মোটা অংকের চাঁদার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ধরণের অভিযোগ মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক। তবু এই অভিযোগে আমাকে ওএসডি করা হয়েছে। বন্ড কমিশনার ঘটনা তদন্ত করছেন।
কক্সবাজার রামু এলাকায় নামে বেনামে বিপুল স¤পদ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা। থাকলে আপনারা খুঁজে বের করেন। এসব নিয়ে আপনারা লিখবেন না। যদি কিছু লাগে আমাকে বলেন, আমি দিব।
এ বিষয়ে জানতে কাস্টমস বন্ড কমিশনার মাহবুবর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।